পুলিশ পদকের আদলে সিভিল সার্ভিস পদক

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ পদকের আদলে সিভিল সার্ভিস পদক প্রবর্তন করা হয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে নীতিমালা। প্রথম বছরে জাতীয় পর্যায়ে পদক বাবদ ২৬ লাখ ৫২ হাজার এবং ৬৪টি জেলার জন্য তিন কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর্থিক ও নীতিমালা সংক্রান্ত প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি। বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা পুরস্কার পাওয়ার পর যেভাবে নামের শেষে বিপিএম বা পিপিএম ইত্যাদি টাইটেল যোগ করতে পারছেন। একই ভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নামের শেষে সিএসএ (সিভিল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডি) টাইটেল যোগ করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলগত অবদানের ক্ষেত্রে নগদ পুরস্কার সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে জনপ্রতি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়া হবে। পুরস্কার কর্মসূচির ব্যয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত বাজেট বরাদ্দ থেকে দেয়া হবে। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এ তিন শ্রেণিতে ছয়টি পুরস্কার দেয়া হবে। প্রতি বছর ২৩ জুন আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবসে আগের অর্থবছরের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে এ পুরস্কার দেয়া হবে। ব্যক্তিগত, দলগত ও প্রাতিষ্ঠানিক এ তিন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পুরস্কার বিবেচনা করা হবে। সাধারণ (সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কার) ও কারিগরি (বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গবেষণা) এ দু ক্ষেত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তি, দল এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দক্ষতা ও সৃষ্টিশীলতাকে মূল্যায়ন করার মাধ্যমে জনমুখি প্রশাসন গড়ে তোলার জন্যই এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া সুস্থ প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত আত্ম-উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত জনসেবা প্রদানে সরকারি কর্মচারীদের উৎসাহিত, সুবিধাভোগীদের চাহিদার ভিত্তিতে সৃজনশীলতা, অভিযোজন মূল্যায়ন করা এবং জনসেবা পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত পরিবর্তনের মাধ্যমে আস্থাশীল জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। ২৮টি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটিতে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কাউকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে। সিভিল সার্ভিস পদক সংক্রান্ত নীতিমালায় পুরস্কারের প্রকৃতি ও পরিধিতে বলা হয়েছে, পুরস্কার হিসেবে পদক (১৮ ক্যারেট মানের দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণপদক), সম্মাননাপত্র এবং নগদ অর্থ দেয়া হবে। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে নগদ পুরস্কার সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে জনপ্রতি সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পদক ও সম্মাননাপত্র দেয়া হবে। ব্যক্তি ও দলগত শ্রেণির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ অধিদপ্তর/ পরিদপ্তর/ দপ্তর, সংস্থা এবং প্রকল্পে কর্মরত স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কারের আওতাভুক্ত হবে।

তবে শর্ত থাকে যে, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব পুরস্কার পদ্ধতি চালু আছে সেসব প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা এ পুরস্কারের বাইরে থাকবেন। ব্যক্তিগত ও দলগত পুরস্কারের জন্য মূল্যায়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে, মনোনীত ব্যক্তির উদ্ভাবিত বিষয় বা সেবা তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিকভাবে সরকারের সেবা কৌশল ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকলে সর্বোচ্চ ১৫ নম্বর দেয়া যাবে। এ ছাড়া সেবার কাঠামোর জন্য ৩০, সেবার বাস্তবায়নের জন্য ৩০ ও ফলাফলের জন্য ২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে নম্বর দেবেন। প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কারের জন্য মূল্যায়ন ছকে বলা হয়েছে, মনোনীত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও সেবা উন্নয়ন কৌশলের জন্য ১০, সেবা উন্নয়নে নেয়া উদ্যোগ এবং তার ফলাফলের জন্য ৫০, সেবা প্রদানের মানসিকতার উন্নয়নে ২০ এবং সরকারের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য ২০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব নম্বরের ভিত্তিতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। এ কমিটিতে মুখ্য সচিব সদস্য বা বিকল্প সভাপতি, অর্থ বিভাগের সচিব, বিপিএটিসি রেক্টর, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব, আইএমইডি সচিব এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত তিন জন বিশিষ্ট ব্যক্তি কমিটির সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন। এ কমিটি’র কার্য পরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মনোনয়ন কমিটি সাধারণ ক্ষেত্রের পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান প্রতিটির বিপরীতে দুইটি করে সর্বোচ্চ ছয়টি এবং কারিগরি ক্ষেত্রের পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান প্রতিটি ক্ষেত্রে দু’টি করে সর্বোচ্চ ছয়টিসহ ১২টি নাম সুপারিশ করবে। কমিটি সুপারিশের পক্ষে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতা উল্লেখ করে পদকের জন্য সুপারিশ করা ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাবে।