ত্রিশালে আসামি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়া এক জঙ্গি

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই প্রিজনভ্যান অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার: প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই ছিলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই জেএমবির নতুন সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেয়। এর আগে দলীয় কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে সংগঠনকে দুটি কমান্ডে ভাগ করা হয়। ত্রিশাল অভিযান (প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই) পরিচালনা করে ফারুক ও সফিকের নেতৃত্বাধীন জেএমবির পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। এ কমান্ডের অধিকাংশ সদস্যই নতুন। যারা ইতঃপূর্বে কখনো পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়নি। আর ওই ঘটনার পরপরই তারা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে তিন জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় অংশ নেয়া মাইক্রোবাসচালক জেএমবি সদস্য জাকারিয়া। সখিপুর থানা পুলিশ গত সোমবার জাকারিয়া ও তার সহযোগী রায়হানকে দু মামলায় ২০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এদিকে অভিযানের জন্য মাইক্রোবাস ও অস্ত্র কেনার সাথে সম্পৃক্ত একজনকে পুলিশ বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করেছে। তাকে নিয়ে পলাতক জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে পুলিশ মামলার তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোট ৬ জনকে আটক করা হলো। আটক অপর তিনজন হচ্ছে- জাকায়িরার স্ত্রী মোসাম্মৎ শামসুননাহার খাতুন স্বপ্না ওরফে সিমু, ভাই ইউসুফ আলী রনি ও শ্বশুর সাব্বির আহমেদ নয়ন। রনি ও স্বপ্নাকে বৃহস্পতিবার ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আর নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

ৱ্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি ৱ্যাবও তার নিজস্ব সোর্স ও তথ্য নিয়ে পলাতক জঙ্গি এবং ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু আশার কথা শুনালে তো হবে না। তাদের যেকোনো মূল্যে ধরতে হবে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, ৱ্যাব-পুলিশের পাশাপাশি পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতারে সিআইডি কাজ করছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে চালানো হচ্ছে সম্মিলিত অভিযান। যেহেতু পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা গতকাল পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, তাই ফলাফল শূন্যই বলতে হবে।

মামলার তদন্তকারী সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে (নয়ন ছাড়া) মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়ার পর জাকায়িরা অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে; কিন্তু তার স্ত্রী (স্বপ্না) মুখ খুলতে শুরু করেছে। জাকায়িরা জানায়, ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে জেএমবির নেতা আতাউর রহমান সানির (২০০৮ ফাঁসি হয়) সাথে ঢাকা পলিটেকনিকের লতিফ ছাত্রাবাস থেকে সে গ্রেফতার হয়েছিলো। ২০১১ সালের শেষ দিকে জামিনে ছাড়া পায়। এর কয়েক মাস পরই বিয়ে করে একই এলাকার মেয়ে স্বপ্নাকে। ছাড়া পাওয়ার পর পরই গোপনে জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি সংগঠন চালানোর জন্য তৈরি করে ফান্ড।

ত্রিশাল অভিযান সম্পর্কে জাকারিয়া জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ছিলো দেশব্যাপি জেএমবির শক্তি প্রর্দশনের প্রথম মহড়া। এরপর অনেক চড়াই-উতরাইয়ের (শীর্ষ ৬ নেতার ফাঁসি, গ্রেফতার হয়েছে শ শ কর্মী) মধ্যদিয়ে চলতে হয়েছে জেএমবিকে। পাশাপাশি দলে ভাঙন তৈরি হয়। পরবর্তীতে পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল কমান্ডে ভাগ করে জেএমবির তত্পরতা শুরু হয়। ত্রিশালে অভিযানও ছিলো তাদের শক্তি প্রদর্শনের দ্বিতীয় মহড়া। তবে এ অভিযানে অংশ নেয় নতুন সদস্যরা। যারা কোনো সময়ই পুলিশ বা ৱ্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়নি।

জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জেএমবির নতুন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এতোদিন ছিলো রীতিমতো অন্ধকারে। জাকারিয়াসহ কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তারা শক্ত মনের মানুষ। তারা মরতে রাজি; কিন্তু তথ্য দিতে রাজি নয়। নানা কৌশল অবলম্বন করেই তথ্য বের করতে হচ্ছে।

পলাতক দু জঙ্গি বোমামিজান ও সালেহীনকে ধরতে পুলিশ, ৱ্যাবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা মির্জাপুর ও সখীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বংশীনগর, বালিয়াজান, ফুলবাড়িয়া, তক্তারচালা, হাতীবান্ধা ও গজারিয়া এলাকায় বিরামহীনভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে; কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পলাতক জঙ্গিদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। একইভাবে রেলস্টেশনগুলোতে বসানো হয়েছে পাহাড়া। জনসাধারণের সহায়তার জন্য চালানো হচ্ছে মাইকিং।