মেহেরপুরের মুজিবননগর ও গাংনী উপজেলায় আওয়ামী লীগকে হারিয়ে ১৯ দলীয় জোট প্রার্থীদের জয়লাভ

১০৯ উপজেলার ফলাফল : বিএনপি ৫২ আ.লীগ ৪১ জামায়াত ৮ জাপা ১ অন্যান্য ৭

 

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। মেহেরপুরের মুজিবনগরে বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদও পেয়েছে ‌১৯ দলীয় জোট। গতবার এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদটি আওয়ামী লীগের থাকলেও এবার তা হাতছাড়া হয়েছে। মেহেরপুর গাংনী উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে বিএনপি তথা ১৯ দলীয় জোটভুক্ত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ১১৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১০৮টির বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৫২টিতে। আর ৪১টিতে বিজয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়া বিএনপির অন্যতম শরিক দল জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৮টিতে এবং জাতীয় পার্টি ১টি। এছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ৭টি।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। একই সাথে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ দলীয় জোটের ২ প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষিত ফলাফলে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম (কাপ-পিরিচ) ২৯ হাজার ৯২৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিয়াউদ্দীন বিশ্বাস (আনারস) ২৬ হাজার ৫৬৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী দারিয়াপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির জারজিস হোসেন (টিউবওয়েল) ৩০ হাজার ৭৪৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মোল্লা (বৈদ্যুতিক বাল্ব) ২২ হাজার ৭৬২ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা তৃণমূল দলের সভাপতি রমজান আলী (তালা) ২ হাজার ১১১ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের গুলনাহার বেগম (কলস) ৩০ হাজার ২৪৩ ভোট পেয়ে পুনঃ নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছকিদা খাতুন (হাঁস) ২৫ হাজার ৬০৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা নির্বাচনে ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। চেয়ারম্যান পদে জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ আলী ১৯ হাজার ৩৪, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা জামায়াতের শুরা সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান সংগ্রাম ১৪ হাজার ১৯২ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা মহিলাদলের সভাপতি লাইলা আরজুমান বানু ১৫ হাজার ৫৯২ ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেছেন।

মুরাদ আলী (আনারস) ৭৭ হাজার ৬৭৭ ভোট ও প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুকুল (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৪৩ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোস্তাফিজুর রহমান সংগ্রাম (টিউবওয়েল) ৭৪ হাজার ১৬৮ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের বন  ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মোহন (চশমা) ৫৯ হাজার ৯৭৬ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাইলা আরজুমান বানু (ফুটবল) ৭২ হাজার ৯৮৫, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সেলিনা মমতাজ কাকলী (হাঁস) ৫৭ হাজার ৩৯৩ (বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান) এবং বিএনপির বিদ্রোহী নুরুন্নাহার আক্তার (কলস) পেয়েছেন ৫ হাজার ৬২০ ভোট। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়া আওয়ামী লীগের ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন (মোটরসাইকেল) ৭০৭ ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবুল কালাম (তালা) পেয়েছেন ৯৮৭ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী তিন প্রার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

এতে ব্যাপক সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণে নোয়াখালী সদর উপজেলার ১১৭টিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার দেড় শতাধিক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আওয়ামী লীগের দাবি ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ১১৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এতে ব্যাপক সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণে নোয়াখালী সদর উপজেলার ১১৭টিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার দেড় শতাধিক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আওয়ামী লীগের দাবি ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। প্রতিনিধিরা অবশ্য জানিয়েছেন,

কেন্দ্র দখল, জালভোট, কারচুপি, ভোটবর্জন এবং সংঘর্ষসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে ১১৫ উপজেলায় ৮ হাজার ১৩৬টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। এর মধ্যে নোয়াখালী নির্বাচন স্থগিত করেছে প্রশাসন।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহেশপুর উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী আব্দুল হাই ১০০টি কেন্দ্রে বেসরকারিভাবে ৭০ হাজার ৬৯৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ময়জদ্দীন হামিদ পেয়েছেন ৫১ হাজার ৪৬৬ ভোট। ১৯ হাজার বেশি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জামায়াত প্রার্থী আব্দুল হাইকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন মহেশপুর সহকারি রির্টানিং অফিসার নাছিমা খাতুন।

বিএনপি ৫২: নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, জামালপুরের ইসলামপুর, চট্টগ্রামের পটিয়া, ঢাকার সাভার, নাটোরের বাগাতিপাড়া, লালপুর ও গুরদাসপুর, নওগাঁ সদর, নওগাঁ বদলগাছি ও পত্নীতলা, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, সিলেটের বালাগঞ্জ, জয়পুরহাট সদর, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, বাগেরহাটের ফকিরহাট, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, মানিকগঞ্জের সদর ও হরিরামপুর, সুনামগঞ্জ সদর, পাবনার চাটমোহর, খুলনার ডুমুরিয়া, ঠাঁকুরগাঁওয়ের রানিশংকৈল, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, জামালপুরের বকসিগঞ্জ, নরসিংদীর শিবপুর, চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, পিরোজপুরের কাউখালী ও নাজিরপুর, নেত্রকোনার বারহাট্টা, লালমনিরহাট সদর, বগুড়ার আদমদিঘী ও শাহাজাহানপুর, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালা, ফরিদপুরের সালথা ও নাগরকান্দা, কুমিল্লার দেবিদ্বার ও মনোহরগঞ্জ, মেহেরপুরের মুজিবনগর ও গাংনী, যশোরের ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মাগুরার শালিখা ও মোহাম্মদপুর, বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের  পেকুয়া, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, সুনামগঞ্জের সদর ও দিরাই এবং দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ৪১: নাটোর সদর, জামালপুরের মেলান্দহ, রংপুরের বদরগঞ্জ, নওগাঁর নিয়ামতপুর ও সাপাহার, টাঙ্গাইলের সখীপুর, জয়পুরহাটের কালাই, মুন্সিগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের ভালুকা, গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালি পাড়া, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, চাঁদপুরের মতলব (উত্তর ও দক্ষিণ) , ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি, কুষ্টিয়ার মিরপুর, খোকসা ও কুমারখালী, ফরিদপুরের বোয়ালমারি, কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও কমলাকান্দা, বরিশাল সদর, ফেনী সদর ও পশুরাম, নোয়াখালীর কবিরহাট, চাটখিল ও কোম্পানিগঞ্জ, ভোলার চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দীন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও বিরামপুর, কক্সবাজারের চকরিয়া, বাগেরহাটের কচুয়া, যশোরের শার্শা ও চৌগাছা, মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর এবং লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

জামায়াত ৮: সাতক্ষীরার শ্যামনগর, দিনাজপুরের চিড়িরবন্দর, চট্টগ্রামের লোহাগড়া, রাজশাহীর বাঘা, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, বগুড়ার শিবগঞ্জ ও কাহালু, ঝিনাইদহের মহেশপুরে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

জাতীয় পার্টি ১: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ। অন্যান্য ৭: বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় জেএসএস প্রার্থী এবং খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ প্রার্থী, বান্দরবানের থানচি স্বতন্ত্রপ্রার্থী এবং রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় জেএসএস (সন্তুলারমা গ্রুপ) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বিদ্রোহী (বিএনপি): পাবনার ভাঙ্গুরা ও নাটোরের গুরুদাসপুরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে নোয়াখালী সদর উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এছাড়া আরো ২৮টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে ইসি।

উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে দেশের ৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪৪টি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৪টি এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ১৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।