শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে দুর্বৃত্তরা

একুশে ফেব্রুয়ারি গোটা জাতি যখন ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলো, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নরসিংদী, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিলেট, ফেনী ও গাজীপুরে অন্তত সাতটি শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে। দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পেরেছে, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্বভাবতই স্থানীয় মানুষের মনে এসব ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শুধু স্থানীয় মানুষ নয়, গোটা জাতি এ সংবাদে উৎকণ্ঠিত। কারা কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হলো, অবিলম্বে তার তদন্ত হওয়া দরকার। এ দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

শহীদ মিনার কেবল মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধই নয়, এটি বাঙালির মননের প্রতীক। এটি আমাদের এক ধরনের অহঙ্কারও বটে। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা প্রতিটি শহীদ মিনার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ দেশের মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাঙালি জাতির জীবনে এ ঘটনার তাৎপর্য অসীম। একমাত্র বাঙালির শত্রুরাই পারে শহীদ মিনারের ওপর আঘাত হানতে। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীও ভেঙে ফেলেছিলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। গত বছর মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারের ওপর আঘাত হেনেছিলো দুর্বৃত্তরা। এ অপশক্তিকে রুখে দেয়াই জনতার কর্তব্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। যারা শহীদ মিনারে আঘাত হানার মতো ধৃষ্টতা দেখায়, তাদের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই।

শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা ছাড়াও কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জের মাধবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একুশের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষসহ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এটা দুঃখজনক। আরও দুঃখজনক, এসব ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে সর্বদা যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা প্রয়োজন। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক রূপ দিতে গিয়ে প্রায়ই এদিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না।