হত্যাশায় মৃত্যু ॥ ঘরনির্মাণের বাঁশ দিয়ে করা হলো দাফন
নজরুল ইসলাম: ভুমি দস্যুদের নগ্নথাবার হাত থেকে বাঁচতে পারলো না হতদরিদ্র ভূমিহীন লাল মোহাম্মদ বিশ্বাস। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিতে মরিয়া ভূমিদস্যু। ভূমিদস্যুদের হুমকি ধামকিতে ভীত হয়ে বিচারের আশায় মাতবরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হলো না কোনো ফল। ক্লান্তি আর হতাশায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন লাল মোহাম্মদ। ভুমিদস্যুদের হুমকি ধামকিতে চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন লাল মোহাম্মদের পরিবারের লোকজন। জরাজীর্ণ ঘরখানি নির্মাণের জন্য আনা বাঁশ ব্যবহার হলো দাফনে। চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে পথে পথে ঘুরছে অসহায় স্ত্রী মরিয়ম।
অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত আমতলা মোড়ে ৩৫ বছর আগে জনৈক সামাদের নিকট থেকে ১ নং খতিয়ানের ৮শ টাকায় মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে পৌনে ৬ শতক জমির ওপর বসতঘর নির্মাণ করেন ইদ্রিস বিশ্বাসের ছেলে হতদরিদ্র লালমোহাম্মদ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ওই জমিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে লাল মোহাম্মদ জানতে পারেন সামাদের নিকট থেকে মৌখিকভাবে কেনা জমি জেলা পরিষদের খাসজমি। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ওই জমিতে মানবিক কারণে তিন সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে বসবাসের জন্য লাল মোহাম্মদকে বলেন। কারণ সরকার খাসজমি ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে। যেহেতু এটা জেলা পরিষদের খাসজমি। সে থেকে লাল মোহাম্মদ সরকারি খাস জমিতেই বসবাস করে আসছেন। জমিটির দক্ষিণপাশে জমি থাকায় মাসখানেক আগে লাল মোহাম্মদের ওই জমিটুকুর ওপর নজর পড়ে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের বড় দুধপাতিলা গ্রামের হুজুর আলীর ছেলে মাহম্মদ গঙের। জরাজীর্ণ ঘরখানি মেরামত করার জন্য গ্রামের কয়েকজনের নিকট থেকে কয়েকটি বাঁশ চেয়ে আনেন লাল মোহাম্মদ। তাতে আরও ক্ষেপে যায় মাহম্মদ গঙের লোকজন। প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি এবং ঘর মেরামতে বাধা দেয় মহাম্মদ ও তার লোকজন। দীর্ঘদিনের বসবাসের ঘর থেকে উঠে যেতে হবে এ কথা শোনার পর থেকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় লাল মোহাম্মদের। তিনি বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেনের শরণাপন্ন হন। চেয়ারম্যান বিষয়টি অবগত হয়ে উভয় পক্ষকে পরিষদে ডাকেন। চেয়ারম্যান স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে জানতে পারেন লাল মোহাম্মদের বসবাসের জায়গাটি জেলা পরিষদের খাসজমি। চেয়ারম্যান বলেন, আমি জেলা পরিষদের নিকট ভূমিহীন লাল মোহাম্মদ যেন ওই জমিতে বসবাস করতে পারে তার জন্য লিখিতভাবে সুপারিশ করি। জেলা পরিষদের লোকজন ওই জমি মাপজোকের সময় দেয়। কিন্তু হঠাত করে জানতে পারি অজ্ঞাত কারণে জেলা পরিষদ থেকে অপারগতা প্রকাশ করে।
এদিকে লাল মোহাম্মদের ছুটাছুটিতে আরও চটে যান মহাম্মদ গঙের লোকজন। এক প্রকার জোর করে ৭ দিনের মধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্রে চলে যাওয়ার সময় বেধে দেয় মহাম্মদ আলীর লোকজন। উপায়ান্ত না পেয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই রক্ষা করতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন লাল মোহাম্মদ।
তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে কাঁদতে কাঁদতে জয়রামপুর বেয়াই বাড়ি যায় আমার স্বামী। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে খবর আসে তিনি দুধপাতিলা রেল লাইনের ধারে পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দোস্ত আমতলা মোড়ের প্রতিবেশীরা টাকা তুলে ঘর নির্মাণের বাঁশ দিয়ে তার দাফন সম্পন্ন করে।