চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গাসহ দেশের ৭৪ উপজেলায় ভোটগ্রহণ ৩১ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার: চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ দেশের ৭৪ উপজেলায় ভোটগ্রহণ আগামী ৩১ মার্চ। এ দিন নির্ধারণ করে তফশিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২ মার্চ, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মার্চ ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মার্চ। কমিশন সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিইসি এ তফশিল ঘোষণা করেন। একই সময়ে আলাদা তফশিলে ২৩ মার্চ ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে ঢাকার ধামরাই উপজেলার নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণা করা হয়।

এ উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি, যাচাই-বাছাই ২৬ ফেব্রুয়ারি ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৬ মার্চ। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মূলত পঞ্চম ধাপের তফশিলই শেষ তফশিল। নির্বাচন কমিশন ৬ ধাপে ৩ মে’র মধ্যে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে মার্চেই শেষ করতে যাচ্ছে। এ তফশিলের মাধ্যমে আপাতত উপজেলা নির্বাচন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে বাদ পড়ছে ২২টি উপজেলার নির্বাচন। সুবিধাজনক সময়ে ওই ২২ উপজেলায় নির্বাচন করা হবে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে। কয়েকটি উপজেলার সীমানা জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত তফশিল ঘোষণা করবে না ইসি। প্রথম দফায় তফশিল ঘোষিত ৯৭ উপজেলায় গত বুধবার নির্বাচন হয়েছে। প্রথম দফাভুক্ত রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলার ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। এছাড়া তৃতীয় দফা তফশিলে ৮৩ উপজেলার ভোটগ্রহণ ১৫ মার্চ, চতুর্থ দফা তফশিলে ৯২ উপজেলার ভোটগ্রহণ ২৩ মার্চ ও সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঘোষিত পঞ্চম দফা তফশিলে ৭৪ উপজেলার ভোটগ্রহণ ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে ৪৬৫ উপজেলার তফশিল ঘোষণা করলো কমিশন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনযোগ্য উপজেলার সংখ্যা ৪৮৭। এ হিসাবে আপাতত ২২টি উপজেলার নির্বাচন হচ্ছে না। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফার তফশিল ঘোষণার পর সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, বেশ কিছু উপজেলা নির্বাচন বাকি থাকবে। কিছু উপজেলার সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয় রয়েছে। কিছু উপজেলার নির্বাচনী সময়সীমা শুরু হয়নি। প্রথম দফা নির্বাচনে বেশ কয়েক উপজেলায় সহিংসতা সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এতো বড় নির্বাচনে দু-একটা অঘটন ঘটলে তাতে অসুবিধা নেই। আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হয় সে জন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। যেসব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের পার্থক্য কম রয়েছে সেখানে পুনরায় ভোট হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ সময় তিনি নির্বাচনের সঠিক ভোটের হার জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুরোপুরি ফলাফল পাইনি। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে এটা অনুমান নির্ভর। সব ফলাফল পেলে সম্পূর্ণ রিপোর্ট জানা যাবে। আগামী নির্বাচনগুলোতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা ইসি করছে কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আশা করছি আরও ভালো নির্বাচন হবে। প্রথম দফা নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে অপরাধীদের ধরা হয়েছে, সাজা দেয়া হয়েছে।

যে ৭৪ উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে : পঞ্চম দফায় দেশের ৭৪ উপজেলায় ৩১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, দিনাজপুরের বিরল, পার্বতীপুর ও হাকিমপুর, নীলফামারীর ডোমার, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ, বগুড়া সদর, রাজশাহীর পবা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও শাহজাদপুর, পাবনা সদর ও বেড়া, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও তালা, বরগুনা সদর, বামনা, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালীর দশমিনা ও কলাপাড়া, টাঙ্গাইল সদর, ঘাটাইল, মির্জাপুর, গোপালপুর ও বাসাইল, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ত্রিশাল ও নান্দাইল, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও পাকুন্দিয়া, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী, সিরাজদিখান ও লৌহজং, গাজীপুরের কালিগঞ্জ, নরসিংদী সদর, মনোহরদী, রায়পুরা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর, সিলেটের বিয়ানীবাজার, মৌলভীবাজারের জুড়ী ও রাজনগর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কসবা, ও আশুগঞ্জ, কুমিল্লার মুরাদনগর ও চান্দিনা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, রামগঞ্জ ও রায়পুর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও উখিয়া, খাগড়াছড়ির দিঘিনালা এবং রাঙ্গামাটি সদর, লংগদু, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি।

যে ২২ উপজেলায় এ ধাপে নির্বাচন হচ্ছে না : রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া, কুমিল্লার আদর্শ সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর, নরসিংদীর রায়পুরা, মাদারীপুর সদর, বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও বিজয়নগর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, নেত্রকোনার আটপাড়া, শেরপুরের নকলা, কুমিল্লার দাউদকান্দি, বরগুনার তালতলী, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, রাজবাড়ীর কালুখালী ও নাটোরের নলডাঙ্গা। এসব উপজেলার অন্তত ৭টিতে সীমানা ও আইনি জটিলতা এবং মেয়াদ শেষ না হওয়ায় এ বছর নির্বাচন হচ্ছে না। বাকি উপজেলাগুলোতে সুবিধামতো সময়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে ইসি।