ফিল্মিস্টাইলে টাকা ভর্তি ব্যাগ ও সোনার গয়না ডাকাতির পর ৬টি বোমার বিস্ফোরণ : গৃহকর্তার গুলি

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় ডাকাতদলের পূর্ব পরিকল্পিত হানা : গৃহকর্তার বাড়ি ফেরার আগেই ডাকাতদলের অবস্থান : দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব

 

ডাকাতদলের ধারালো অস্ত্রের কোপে ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক ও তার কর্মচারী আহত : খাবলিপাড়ার দুজন গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় সন্ধ্যারাতে একদল ডাকাত ফিল্মিস্টাইলে তাণ্ডব চালিয়েছে। গৃহকর্তা এমএম ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুল মালেকসহ পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাগভর্তি নগদ প্রায় ১০ লাখ টাকা ও কমপক্ষে ১০ ভরি সোনার গয়না ডাকাতি করে পালানোর সময় পরপর ৬টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গৃহকর্তা আব্দুল মালেককে ও পিটিয়ে তার কর্মচারী সোহাগকে আহত করেছে ডাকাতদল। গৃহকর্তার নিজস্ব বন্দুকের গুলিতে আহত হয়েছে আরামডাঙ্গার রবিউল। দুজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের এমএম ফিলিং স্টেশন ও হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফেরেন। বাড়ির দরজায় পৌঁছুতেই ডাকাতদলের হাতে জিম্মি হন তিনি। তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগটি ডাকাতদল হাতিয়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ির ভেতরে নেয়। বাড়ির দোতলাসহ সিঁড়ির সামনে পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো অস্ত্রধারী ডাকাতদলের সদস্যরা। আনুমানিক আধাঘণ্টা ধরে ডাকাতি করে ডাকাতদল। ডাকাতিতে বাধা দিলে ডাকাতদলের এক সদস্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে আব্দুল মালেকের বাম হাতে কোপ মারে। রক্তাক্ত জখম হন তিনি। ডাকাতদল আব্দুল মালেকের স্ত্রীর কমপক্ষে ১০ ভরি সোনার অলঙ্কার ডাকাতি করে। ডাকাতি করে পালানোর সময় ডাকাতদল বাড়ির সামনে ও পাশের দেয়ালে পরপর ৬টি বোমা নিক্ষেপ করে। গৃহকর্তা মুক্ত হয়ে দ্রুত তিনি তার লাইসেন্স করা বন্দুকটি হাতে নিয়ে ডাকাতদলকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোঁড়েন। গুলিতে ডাকাতদলের তেমন কেউ আহত না হলেও ডাকাতির খবরে কার্পাসডাঙ্গা বাজার থেকে ছুটে বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া রবিউল ইসলাম (৩৫) আহত হন। তিনি আরামডাঙ্গার ফকির মোহাম্মদের ছেলে। তার কানে গুলির ছররা লেগেছে। এছাড়াও ডাকাতদল পিটিয়ে আহত করেছে গৃহকর্তা আব্দুল মালেকের দোকান কর্মচারী সোহাগকে (২২)। সে কার্পাসডাঙ্গার সিদ্দিকের ছেলে। আব্দুল মালেক, রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। সোহাককে স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আব্দুল মালেক বলেছেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে দোকানের ও ফিলিং স্টেশনসহ আমার রায়সা ইটভাটার টাকা একটি ব্যাগে করে নিয়ে ফিরছিলাম বাড়িতে। আমি বাড়ি না থাকলে বাইরে থেকে প্রধান গেটে তালা মারা থাকে। বাড়ির গেটে পৌঁছুতেই দেখি দরজার অংশ বিশেষ খোলা। পাশেই লোকজন। দরজার কাছে পৌঁছুতেই ডাকাতদল আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। কাছে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাড়ির দোতলায় তুলে নিয়ে ডাকাতদল নিবির্ঘ্নে ডাকাতি করতে থাকে। বাড়িতে থাকা সোনার গয়নাগাটি সবই ডাকাতি করে। এ সময় নিজের বন্দুকটি হাতের কাছে নেয়ার চেষ্টা করতে গেলে ডাকাতদল আমার হাতে কোপ মারে। ডাকাতি শেষে ডাকাতদল পালাতে শুরু করলে দ্রুত বন্দুকটি নিয়ে গুলি ছুঁড়ি। প্রথম ট্রিগারে গুলি হলে ডাকাতদলের একজন পড়ে যেত। দুর্ভাগ্য। প্রথম গুলিটি লকের কারণে হয়নি। পরে তিনটি গুলি ছুঁড়ি। টাকার ব্যাগে কতো টাকা ছিলো তা অবশ্য তিনি নিশ্চিত করে জানাননি। তবে সংশ্লিষ্টসূত্র বলেছে, গতকালই দু ট্রাক রড বিক্রি করেছেন নগদ টাকায়। ওই টাকাসহ ইটভাটা ও ফিলিং স্টেশনের টাকা ছিলো ওই ব্যাগে। ডাকাতদল যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করেছে তা নিয়ে তেমন সন্দেহ নেই বলেও মন্তব্য স্থানীয় অনেকের।

ডাকাতদল যখন আব্দুল মালেকের বাড়িতে তাণ্ডব চালায়, তখন কার্পাসডাঙ্গা বাজারেই অবস্থান করছিলো টহল পুলিশ। ডাকাতদলের নিক্ষেপ করা ৬টি বোমার বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। গৃহকর্তার ছোঁড়া গুলির শব্দেও আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। অনেকেই দিগ্বিদিক ছুটে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলেও বাজারের বেশ কিছু মানুষ আব্দুল মালেকের বড় ভাইয়ের এমএম ব্রিকফিল্ড সংলগ্ন আব্দুল মালেকের বাড়ির সামনে ছুটে যায়। এ সময় গৃহকর্তার গুলিতে রবিউল আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, ডাকাতদল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করেছে। গৃহকর্তা বাড়িতে থাকলে ডাকাতদল বন্দুকের গুলির মুখে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না ভেবেই তারা গৃহকর্তার বাড়ি ফেরার ঠিক পূর্বমূহূর্তে বাড়ির প্রধান গেটের তালা ভেঙে অবস্থান নেয়। আব্দুল মালেক বাড়ির প্রধান ফটকের নিকট পৌঁছুতেই ডাকাতদল তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। ডাকাতদলে আনুমানিক ৩০/৩২ জন ছিলো।

স্থানীয়রা বলেছেন, এলাকায় ডাকাতি ও চাঁদাবাজচক্রের অপতৎপরতা ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। গত ৪ জানুয়ারি রাতে চাঁদাবাজচক্র আব্দুল মালেকের বাড়িতে পরপর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে। এছাড়া মাঝে মাঝেই তার নিকট মোবাইলফোনে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদাবাজ চক্রের অপতৎরতারোধে পুলিশ তেমন পদক্ষেপই নিতে পারছে না। এরই মাঝে কার্পাসডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন বাড়িতে সন্ধ্যারাতে ডাকাতদল তাণ্ডব চালিয়ে নিবির্ঘ্নে সটকে পড়লো। আর পুলিশ বসে থাকলো কার্পাসডাঙ্গা বাজারে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ইমদাদ আহত হয়েছেন বলে জানিয়ে বলেছেন, ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ দল আব্দুল মালেকের বাড়ির দিকে রওনা হয়। ধাওয়া করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাতদল ধরা পড়েনি। তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আহসান হাবীব বলেছেন, চাঁদাবাজরা হামলা চালানোর সাথে সাথেই খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই ইমদাদুল হক। প্রতিরোধের মুখে দারোগা ইমদাদ আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক পুলিশি উপস্থিতির কারণে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন আ. মালেকসহ প্রতিবেশীরা। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর থেকেই পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কামরুজ্জামান গতরাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল মালেকের সাথে কথা বলেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা জানতে চান। ডাকাতির শিকার ক্ষুব্ধ আব্দুল মালেক সহকারী পুলিশ সুপারকে বলেন, আমার নিরাপত্তা কোথায়। কার বিরুদ্ধে কী বলবো। তা গোপন থাকবে তারই বা নিশ্চয়তা দেবে কে? কিছুই বলবো না। এ সময় সহকারী পুলিশ সুপার অবশ্য লাগাতারভাবে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দেন।

গতরাতেই কার্পাসডাঙ্গা খাবলিপাড়ার নূর ইসলামের ছেলে আব্দুল কাদের হিরককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি পুলিশ গতরাত দেড়টার দিকে তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ বলেছে, হিরকের গায়ে কাঁদামাটি মাখা ছিলো। সে এই ডাকাতির সাথে জড়িত। তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।