আহাজারি নিশ্চয় কর্তাবাবুদের কর্তব্যপরায়ণ করতে ভাঙাবে কুম্ভঘুম

 

শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনায় ৭ শিশুশিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরেছে। আহত হয়েছেন শিক্ষকসহ কমপক্ষে ৪৭ জন। মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ফেরার পথে মহেশপুর-চৌগাছা সড়কের ঝাউতলা নামক স্থানে গতপরশু রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সড়কের ওপর সবজি জাতীয় ডাটা রাখার কারণে চালক বাসটির গতি কমাতে ব্রেক করেন। বৃষ্টির কারণে সড়ক ছিলো পিচ্ছল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে বাসটি। এ দুর্ঘটনার জন্য চালকের অদক্ষতা যেমন দায়ী, তেমনই সড়কের ওপর ডাটা রাখা ব্যক্তিও কম দায়ী নন। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকবে।

সড়ক নানাভাবেই মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে। চরম বিশৃঙ্খলা সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। দুর্ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর যুগ বহু আগে গত হলেও দায়িত্বশীলদের মধ্যে যে এখনও দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালনের প্রবণতা বিদ্যমান তা বলাই বাহুল্য। সড়ক নিরাপদ করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ। দেশে প্রচলিত আইন প্রয়োগে দায়িত্বশীলেরা অনমনীয় এবং আন্তরিক হলে দুর্ঘটনা হ্রাস পেতে বাধ্য। নানা কারণেই দায়িত্বশীলদের মধ্যে আইন প্রয়োগে গড়িমসি পরিলক্ষিত হয়। সড়কে শ্যালোইঞ্জিনচালিত হরেক নামের যান অবৈধ হলেও দিব্যি চলছে। সর্বশেষ উচ্চাদালত এসব অবৈধযান সড়ক থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দিলেও তা কি পালন করা হচ্ছে? চেষ্টা চলছে। এ বলে দায় এড়ানো গেলেও সড়ক নিরাপদ হবে না। সড়কে অবৈধ যানের জন্যই যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়। দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনা হ্রাসে অবৈধ যান উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রয়োজন আইন প্রয়োগে আন্তরিকতা। আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে পথচারী, চালকসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। অবশ্য চালকের দক্ষতা সুনিপূণভাবে যাচাই করে চালকসনদ প্রদানের বিষয়টি বেশ গোলমেলে। পদ্ধতিগত ত্রুটি বিদ্যমান। এসব থেকে মুক্ত হতে হলে কোনো গোষ্ঠীর কাছে নত হলে চলবে না। চালকের দক্ষতা যাচাই করেই লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই চালকের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি সড়কে সবজি, ভুট্টার ডাটা, ইটভাটার মাটি ফেলে রাখা হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

যশোর শার্শা উপজেলার গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীরা মেহেরপুরের মুজিবনগর শিক্ষা সফরে যোগ দেয়। উল্লাস করে। সেই উল্লাস যে বাড়ি ফেরার পথে থেমে যাবে কে জানতো? সড়কের ওপর ডাটা রেখে যে ব্যক্তি সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ করেছিলেন তিনি কি সচেতন? হয়তো জানেনই না, সড়কে ওসব রাখা অন্যায়। বুঝবে কীভাবে যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকে? চালক দক্ষ হলে পিচ্ছিল রাস্তায় অতোটা কড়া ব্রেক করতেন কি? শিক্ষা সফরের বাস পুকুরে পড়ার আড়ালে অবশ্যই একাধিক কারণ রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্তান হারানো পিতা-মাতার আহাজারি নিশ্চয় কর্তাবাবুদের কর্তব্যপরায়ণ করতে ভাঙাবে কুম্ভঘুম।