চুয়াডাঙ্গা বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে হঠাত জ্বলে ওঠা আশার আলো নিভে অন্ধকার

মোজাম্মেল-অহিদুল কিছুক্ষণের আলোচনা : ভেস্তে গেছে চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলায় একক প্রার্থী দেয়ার প্রাথমিক উদ্যোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা বিএনপি মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে হঠাত জ্বলে ওঠা আশার আলো দপ করে নিভে গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সকল অংশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের অঘোষিত কথা থাকলেও এর আগে ১১টার দিকে ‘মুরুব্বি মানি, সভাপতি মানি না’ উক্তি সম্প্রীতির পরিবেশ তিক্ত করে। ফলে অঙ্কুরেই ঝরে গেলো গোলাপ। বিএনপি সমর্থকদের মাঝে বাড়লো দীর্ঘশ্বাস। অবশ্য সন্ধ্যায় সম্প্রীতির ভিন্ন চিত্র কিছু নেতা-কর্মীকে চমকালেও উপজেলা নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলায় একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি ঘুলিয়ে গেছে। গুঁড়িয়ে গেছে জেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হকের আত্মবিশ্বাসও।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মন্তব্য করতে গিয়ে বলছে, সারাদেশেই বিএনপির প্রায় অভিন্ন দশা। বহুভাগে বিভক্ত। অন্তঃদ্বন্দ। ঘরের আগুনে জ্বলেই বিএনপি হারাচ্ছে সম্ভাবনার দিন। দফায় দফায় চরম সঙ্কট দেখা দিলেও কেন্দ্রীয়ভাবেও তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে অবস্থা দিন দিন বেসামাল হয়ে পড়ছে। খণ্ড বা অংশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অধিকাংশেরই লক্ষ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন। চুয়াডাঙ্গা জেলার ২টি আসনের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির বিভক্তকরণ হাস্যকর রূপ নিয়েছে। এখন আর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি দু ভাগে বিভক্ত নয়, কমপক্ষে ৮ ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির দুটি কমিটি। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি অনুমোদিত হলেও অপরাংশের নেতা তা মানতে নারাজ। মূলত সে কারণেই উপজেলা নির্বাচনে জেলার ৪টি উপজেলায় বিএনপির একক প্রার্থী নিশ্চিত করার উদ্যোগ গতকাল ভেস্তে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কেন্দ্র অনুমোদিত অংশের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মো. মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু। অপরাংশের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের সহোদর অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। এ অংশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা প্রথমে দায়িত্ব নিলেও তিনি ওই পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পাশাপাশি অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের পক্ষ ত্যাগ করেন। কিছুদিন নীরব থাকার পর তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের অন্যতম সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী লে.কর্নেল (অব.) কামরুজ্জামানের সাথে যুক্ত হয়েছেন। জেলা বিএনপির অর্থসম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে আলাদা করে দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহি নিজের মতো করে ঘর গোছাচ্ছেন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের কমিটির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মখলেছুর রহমান তরফদার টিপু মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কাজ করছেন। যুবদলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শিল্পপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এলাকার নেতাকর্মীদের আহ্বানে মাঠে নেমে দল গোছানো নিয়ে ব্যস্ত। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তার অনুসারীরা প্রচার করলেও তিনি অবশ্য বলেছেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে নেমেছি। মনোনয়ন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নিশ্চিত করবে। ওটা নিয়ে নয়, ঘর গোছানোটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। অভিন্ন বক্তব্য অবশ্য অন্যদেরও। বাস্তবে তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকেরা। এরই মাঝে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ৪টি উপজেলায় একক প্রার্থী নিশ্চিত করার গুরুত্ব অনুধাবন করে হাজি মোজাম্মেল হক সকল অংশের সকল শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা বৈঠকের কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি অপরাংশের সভাপতি অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস উপস্থিত হন জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হকের ইমার্জেন্সি রোডস্থ নিজ বাড়িতে।

সূত্র বলেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস কয়েকজনকে সাথে নিয়ে হাজি মোজাম্মেল হকের বাসায় উপস্থিত হন। তিনি মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘মুরুব্বি মানলেও জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে মানি না। কারণ ওই কমিটি চোরাই কমিটি। আমি ও আমরা যে কমিটি করেছি, সেটাই মানতে হবে।’ হাজি মোজাম্মেল হক এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, কেন্দ্র অনুমোদিত কমিটিকে মানি না বললে কেন্দ্রকেই তো অস্বীকার করা হয়। নিজেই নেতা সাজলে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার উদ্যোগ সফল হবে কীভাবে?

বেশ কিছুদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার ৪টি উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি সকল অংশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। একে অপরের সাথে টেলিফোনে আলোচনাও করেন। সম্মতও হন। হাজি মোজাম্মেল হক সকলের সম্মতি পেয়ে আশায় বুক বাধেন। বিকেলে বৈঠকের আগেই সভাপতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার হেতু নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। এদিকে গতকালই সন্ধ্যায় অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও শামসুজ্জামান দুদুর সাথে বৈঠকে বসেছে বলে খবর পাওয়া যায়। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনভুক্ত চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর রটে। এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সূত্র বলেছে, অহিদুল ও দুদু প্রার্থী ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলেছেন। এদের বৈঠক নতুন চমক হলেও তেমন আশার আলো জাগাতে পারেনি বলেই অভিমত অনেকের।