ইটভাটা থেকে ধরে নিয়ে দু নৈশপ্রহরীকে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন

দামুড়হুদার বোয়ালমারী গ্রামের আমবাগানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি/দর্শনা অফিস: দামুড়হুদায় ইটভাটার দু নৈশপ্রহরীকে ভাটা থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। পুলিশের দাবি তারা চরমপন্থি দলের সদস্য। প্রতিপক্ষের হাতে তারা খুন হয়েছে। গত রোববার রাতে দামুড়হুদার বোয়ালমারী কানাইবাবুর আমবাগানে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে পুলিশ ওই স্থান থেকে লোশ দুটি উদ্ধার করে থানায় নেয়। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা  সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতরা হলো, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের মৃত তামির শেখের ছেলে শাহাবুর ওরফে সাগর (৩০) ও একই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে সেলিম শেখ (৩৬)। সকালেই এএসপি (সার্কেল) কামরুজ্জামান, ৱ্যাব-৬ এর ডিএডি জাকির হোসেন ও দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, সোমবার সকালে নতিপোতা ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের কানাইবাবুর আমবাগানের সামনে রাস্তার ওপর একটি এবং আমবাগানের মধ্যে আরও একটি গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবিব সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত দুজনের নাম পরিচয় শনাক্ত করেন এবং লাশ দুটি উদ্ধার করে থানায় নেন। বেলা ১১টার দিকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। বিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ নিহতদের পরিবারের লোকজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। গতকাল বিকেলেই নিহত শাহাবুরের বড় ভাই তাহাজুদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনের নামে দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ গ্রামের কবরস্থানে নিহতদের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নিহত সেলিমের চাচাতো ভাই আজিজুর রহমান জানান, নিহতরা মহাজনপুরের মিজানুর রহমান কাজল মিয়ার স্টার ইটভাটায় নৈশ প্রহরী হিসেবে কাজ করতো। সন্ত্রাসীরা তাদেরকে ইটভাটা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। মিজানুর রহমান কাজল ও মিসকিন আলী ভয় ও আতঙ্কে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজচক্রকে একের এক চাঁদা পরিশোধ করে আসছেন। ফের মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। এ টাকা দিতে আপত্তি জানানো হয় বিক্সের মালিক পক্ষ থেকে। এতে চাঁদাবাজচক্র ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দেয়।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, নিহত দুজনই স্থানীয় চরমপন্থি দলের (বারী হক-কাশেম গ্রুপ) সক্রিয় সদস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা খুন হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবিব জানান, নিহত দুজনই দামুড়হুদা ও মুজিননগর থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাদের নামে মুজিবনগর থানায় চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া প্রায় বছর খানেক আগে ফেনসিডিল পাচারের অভিযোগে ওই দুজনকে দামুড়হুদা থানা পুলিশ ২ বার আটক করে। মাত্র দেড় মাস আগে তারা জামিনে হাজতমুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। এরই মধ্যে এ খুনের ঘটনা ঘটলো। প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা তাদেরকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহত দুজনের পরিচয়: শাহাবুর ওরফে সাবুর ওরফে সাগর ও সেলিম শেখ মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের কলেজপাড়ার বাসিন্দা। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সে ছিলো  তৃতীয়। ব্যক্তিগত জীবনে শাহাবুর ছিলো বিবাহিত। সে ১ ছেলে ও ১ মেয়ের পিতা।  সেলিম শেখ একই গ্রামের বাসিন্দা। ১ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে ছিলো বড়। ব্যক্তিগত জীবনে সেলিমের রয়েছে দু সংসার। প্রথম পক্ষের সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে এবং দ্বিতীয় সংসারে রয়েছে ১টি ছেলে সন্তান।