আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে হবে

দিন যতোই যাচ্ছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে। এর ফলে লাখ লাখ গ্রাহক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যারা ব্যাংককে তাদের পুঁজি লগ্নির নিরাপদ মাধ্যম মনে করে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখার টাকা লুট ও চুরির ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং গ্রাহকদের আস্থা হারাচ্ছে। কিছু দিন আগে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ১৬ কোটি টাকা চুরি হলো সুড়ঙ্গ কেটে। যদিও ওই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ। সাধারণত ব্যাংকের টাকা থাকার নিয়ম ভল্টের ভেতরে সিন্দুক ও আলমারিতে। কিন্তু শাখাটি থেকে যে অর্থ চুরি হয়েছে, তা টেবিলের ওপর কেন রাখা হয়েছিলো সে বিষয়টিও আজও রহস্যজনক। কেন এবং কীভাবে এতো বিপুল অঙ্কের টাকা টেবিলের ওপর রাখা হয়েছিলো এবং এর সাথে ব্যাংকের কারা কারা জড়িত ছিলো তা আজও উদঘাটিত হয়নি। ব্যাংকের বাইরে এক বা একাধিক ব্যক্তির পক্ষে এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।

হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছিলো, তার সাথে যুক্ত হলো রোমহর্ষক আরেকটি ঘটনা। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতেও যে এমন ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের মাত্র ৯টি শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি অনিয়ম-আত্মসাতের ঘটনা দেশব্যাপি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অথচ এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুরি ও জালিয়াতির সাথে জড়িত রয়েছে। ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের মতো কয়েকটি ব্যাংক লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। কখনো ছাদ কেটে ভেতরে ঢুকে; কখনো সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে; কখনো বা অস্ত্র দেখিয়ে, নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে লুটপাট চালানো হচ্ছে। বেশির ভাগ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাংক ও সোনার দোকানে লুট বা ডাকাতি করে একই সিন্ডিকেট। দেশে এ ধরনের সিন্ডিকেট হাতে গোনা চার-পাঁচটি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো এ অপরাধী চক্র গ্রেফতার বা এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা এ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। অনেক সময় এসব ঘটনার তদন্তের অগ্রগতিই হয় না, অপরাধীর বিচার হবে কীভাবে? এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি উদাসীন থাকে তবে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেমন ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে একইভাবে দায়িত্ব রয়েছে সরকারেরও। কারণ পুঁজি হারিয়ে গ্রাহকরা পথে বসুক এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মনে রাখতে হবে নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজে গেছে। আর্থিক খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে ১৬ কোটি মানুষকে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। এর ওপর যদি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নড়বড়ে থাকে এবং গ্রাহকের টাকা চুরি বা লুট করা হয় এবং অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে যায়; তারা নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? অপরাধীদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত না করা গেলে ভবিষ্যতেও ঝুঁকি থেকে যাবে। যে করেই হোক চুরি, লুট, ডাকাতি, জালিয়াতি ও অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।