ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু : সর্বহারা শতাধিক পরিবার

রাজধানী মধুবাগ ঝিলপাড়ার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগে ঝিলপাড় সংলগ্ন এলাকায় একটি বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে গেছে তিন শতাধিক ঘর। নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এক শিশু মারা গেছে। নিহত শিশুর নাম সবুজ (৩)। সে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এলাকার শিমুল কচি গ্রামের হাসমত আলী ও মদিনা বেগমের ছেলে। রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে ৩ বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় সে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে।

মদিনা বেগম জানান, তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। তার স্বামী রিকশা চালান। সকালে স্বামী রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেলে মদিনা দু সন্তানকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে কাজে চলে যান। আগুন লাগার পর মেয়ে সাথী কোনো মতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও সবুজ ঘুমন্ত অবস্থায়ই দগ্ধ হয়ে মারা যায়। এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও, বারিধারা ও সদরসহ ১১টি ইউনিট কাজ করেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) আবদুস আলাম জানান, আমরা প্রথমে ৪টি ইউনিট নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন মারাত্মকভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় বারিধারা, তেজগাঁও ও সদর থেকে আরও ৭টি ইউনিট নিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে সালাম জানান, আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, দুর্ঘটনাস্থলের একপাশে ছিলো রিকশার গ্যারেজ আর অন্যপাশে ছিলো বস্তি। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ওই বস্তির একাংশের মালিক মহিউদ্দিন বাবুলের একটি ঘরের লাকড়ির চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শটসার্কিটে বৈদ্যুতিক লাইনেও আগুন লেগে যায়। এতে আশপাশের ঘরগুলোতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আগুনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ইব্রাহীমের বস্তিতেও। সেখানেও আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে আগুন নেভাতে স্থানীয় লোকজন প্রাণান্তকর চেষ্টা করেন। তাদের সাথে প্রায় ৩০ মিনিট পরে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। প্রায় আড়াই ঘণ্টা একটানা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত হওয়া বস্তিটি ছিলো টিন ও কাঠের তৈরী দোতলা আকৃতির। সেখানে গাদাগাদি করে ছিলো প্রায় ২০০টির মতো ঘর। ১০ কাঠার ওই বস্তির মালিক মহিউদ্দিন বাবুল। তার বড় ভাই মফিজউদ্দিন মানিক ও তাদের বোন আকলিমা আক্তার। ২০০১ সালে এ জায়গাটি কিনে তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয় বলে জানা যায়। আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বস্তির একাংশের মালিক বাবুল বলেন, সকাল বেলা ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার শুনতে পাই। ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে দেখি  চারদিকে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তাড়াতাড়ি সবাইকে ডেকে ঘর থেকে বের করি এবং আগুন নেভাতে আশপাশের লোকজনকে ডাকি। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছে যে ভাড়াটিয়ারা তাদের মালপত্র কিছুই বের করতে পারেননি। এখানে যারা থাকেন তাদের বেশির ভাগই রিকশাচালক ও গার্মেন্টকর্মী। আগুন লাগার সময় এদের বেশির ভাগই কাজে ছিলো বলে তিনি জানান। তবে আগুন কিভাবে লেগেছে তা তিনি বলতে পারেননি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সব হারিয়ে নিঃস্ব-অসহায় মানুষ আহাজারি করছেন। শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে তাদের অনেকেই দিশাহারা।