গাংনীতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও শ্যালোইঞ্জিন চুরির ঘটনায় চাষিদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে বৈদ্যুতিক সেচপাম্পের ট্রান্সফরমার ও শ্যালোইঞ্জিন চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে। পুনরায় সেচ যন্ত্রপাতি কিনতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা।

বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরের বোরো মরসুমে মাঠে থাকে বিপুল সংখ্যক সেচপাম্প ও শ্যালোইঞ্জিন। এ মরসুমেই মূলত চুরির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। গত ছয় মাসে কাজিপুর, হিজলবাড়িয়া, মহাম্মদপুর ও  মড়কাসহ বিভিন্ন মাঠ থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক ট্রান্সফরমার ও শ্যালোইঞ্জিন চুরি হয়েছে। রাইপুর গ্রামের বৈদ্যুতিক সেচপাম্প মালিক মকলেছুর রহমান জানিয়েছেন, ট্রান্সফরমার চুরি হলে চাষিদের বিপদের শেষ নেই। নগদ টাকা দিয়ে পল্লী বিদ্যুত থেকে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। এতে যেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি চাষাবাদে ভাটা পড়ছে।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামা বেশ মূল্যবান। এজন্যই ট্রান্সফরমার চুরি হয়। মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির প্লান্ট হিসাবরক্ষক কামরুজ্জামানের কাছে ট্রান্সফরমারের দাম জানতে চাইলে তিনি জানান, ৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৩৫ হাজার, ১০ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৫৩ হাজার, ১৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৬৯ হাজার, ২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার ৯৭ হাজার, ৫০ কেভিএ ট্রান্সফরমার ১ লাখ ২ হাজার এবং ৭৫ কেভিএ ট্রান্সফরমারের দাম ২ লাখ টাকা। সাধারণত সেচপাম্প ও আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার বেশি ব্যবহার হয়। পল্লী বিদ্যুত সমিতির নীতিমালা অনুযায়ী প্রাকৃতিক কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হলে মেরামত কিংবা নতুন ট্রান্সফরমারের মোট মূল্যের অর্ধেক গ্রাহকে প্ররিশোধ করতে হবে। চুরি হলে সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে গ্রাহককে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। এ কারণে বেশিরভাগ সেচপাম্প মালিক বৈদ্যুতিক পোলের সাথে শিকল দিয়ে ট্রান্সফরমার বেঁধে রাখেন। মরসুম শেষে ট্রান্সফরমার খুলে বাড়িতে রাখা হয়। এরপরও চোরের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ট্রান্সফরমার কিংবা শ্যালোইঞ্জিন।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শৈলেন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, ট্রান্সফরমার রক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের কিছুই করার নেই। তবে চুরির ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চাষিরা বলেন, বেশিরভাগ মাঠে রাত জেগে পাহারা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ বিষয়টি নিয়ে আরো সক্রিয় হয় তাহলে চুরি কমানো সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এক চোরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে তার সহযোগীদের নাম পাওয়া গেছে বলে জানান গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।