স্টাফ রিপোর্টার: আজ থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন। এরমধ্যে সাত লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ জন ছাত্রী। গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৫৫৪ জন। গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ তিন হাজার ২০৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলো। গতকাল শনিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করতে সব মহলের সহযোগিতাও চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, এবার দু হাজার ৯৪২টি কেন্দ্রে ২৭ হাজার ৪৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে। গত বছরের থেকে এবার ৪১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ১৮৪টি কেন্দ্র বেড়েছে। এবার আটটি বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১০ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৫ জন, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে দু লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৯ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ দুই হাজার ৪২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে। ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ২২শে মার্চ পর্যন্ত তত্ত্বীয় বিষয়ের পরীক্ষা হবে। আর ২৩ থেকে ২৭শে মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শেষে হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২০ মে’র মধ্যে ফল দিতে পারবো। যেন ১ জুলাই শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হতে পারে। প্রথমদিন রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আট বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথমপত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা রয়েছে। মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে সকাল ১০টা থেকে কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে বাংলা-২ সৃজনশীল পরীক্ষা রয়েছে। এবার বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং গণিত ছাড়া বাকি ২১টি বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্ন সব বোর্ডে একই হবে। তবে সনাতন প্রশ্নগুলো হবে বিভিন্ন বোর্ডে আলাদা আলাদা। এবারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও সেরিব্রাল পলসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী শ্রুতি লেখক সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। তাদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেয়া ও ফল দেয়ার সময়সীমা নির্ধারিত হয়ে গেছে। তবে এ বছর বিশ্ব ইজতেমার কারণে ১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা না নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সব মহলের সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রী জানান, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে ব্যবস্থা নিয়েছি তাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে। এবারও জনপ্রতিনিধিরা পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারবেন না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো শিক্ষকও এবার মোবাইলফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে পারবেন না। তবে কেন্দ্রসচিব মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
যশোর বোর্ডে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৩০ হাজার: ২০১৪ সালের স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে অধীনে ১০ জেলার ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০২ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। গত বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ১৮ হাজার ২৯৩ জন।
অর্থাৎ এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১২ হাজার। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মুহাম্মদ আবু দাউদ। জানা যায়, এ বোর্ডের অধীনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২ হাজার ৪৮৫টি স্কুলের ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০২ জন পরীক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এদের মধ্যে ৬৬ হাজার ৩৩২ ছাত্র ও ৬৩ হাজার ৯৭০ ছাত্রী রয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক বিভাগের ৬৬ হাজার ৯৬ জন, বিজ্ঞানের ৯ হাজার ৯২৭ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৪০ হাজার ৯৫৪ জন রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী যশোরে ২৩ হাজার ৬৪৯ জন ও সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী মেহেরপুরে ৪ হাজার ৮৭৭ জন।
এছাড়া খুলনায় ২১ হাজার ৩১০ জন, বাগেরহাটে ১১ হাজার ৪৫১ জন, সাতক্ষীরায় ১৫ হাজার ৬৬ জন, কুষ্টিয়ায় ১৫ হাজার ৪৩৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৮ হাজার ১২১ জন, নড়াইলে ৬ হাজার ৫১৫ জন, ঝিনাইদহে ১৪ হাজার ৭৪০ জন ও মাগুরায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৭।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা। মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনাল ৬টি এবং দাখিল ২টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। এ লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস। পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসএসসিতে মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬১২ জন, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮২১, নবগঠিত আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৯০, মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮০৭, গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২৮ জন এবং বামন্দী-নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৯১৭ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। মেহেরপুর আলিয়া মাদরাসা ও গাংনী সিদ্দিকীয় সিনিয়র আলীম মাদরাসা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি ভোকেশনালে মেহেরপুর ও মুজিবনগরে ৪৬৯ জন এবং গাংনীতে ৪১৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।