ফলোআপ: আলমডাঙ্গার নাগদাহে নিহত শহিদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন
মোমিনপুর প্রতিনিধি: জমিক্রেতা ছোট লোকভাড়া করে পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের চাচাতো ভাই কৃষক শহিদকে হত্যা করেছে। হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাদী এরকমই মন্তব্য করেছেন। আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে মোজাম্মেল, আতিয়ারসহ ১১ জনের নাম।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নাগদাহ উত্তরপাড়ায় গতপরশু রাত ৯টার দিকে বাড়ির উঠোনে দলেচটকে হত্যা করা হয় কৃষক শহিদকে। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। নিহত শহিদের পরিবারের অভিযোগ, সালিসসভায় আগে থেকেই জমির ক্রেতা ছোট মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নাগদাহের মহাবুল, মোজাম্মেল, আতিয়ারসহ বেশ কয়েকজনকে ভাড়া করে সালিসে আনে। এ ভাড়াটে গুন্ডারাই শহিদকে মারধর করে দলেচটকে হত্যা করেছে। গতকাল বুধবার আলমডাঙ্গা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ঘাতকরা আত্মগোপন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের উত্তরপাড়ার আপিল মণ্ডল তিন বছর আগে তার বাড়ি সংলগ্ন চার শতক জমি বিক্রি করে প্রতিবেশী আরশেদ আলী ছেলে ছোট বুড়ো ওরফে ছোটর নিকট। জমির টাকা দেয়ার পর সেই জমিতে গোডাউন নির্মাণ করে ব্যবসাও শুরু করেন ক্রেতা ছোট। জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। কেনা জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললে বিক্রেতা আপিল মণ্ডলের দু ছেলে সাদ আলী ও হোসেন আলী আরও দু লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গতপরশু রাত ৮টার দিকে উত্তরপাড়ার মোড়ে সালিসসভার আয়োজন করা হয়। সালিসসভায় উভয়পক্ষের লোকজন উপস্থিত হয়। সালিসে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললে বিক্রেতার দু ছেলে আরও টাকা দাবি করলে উত্তেজনা দানা বাধে। এক পর্যায়ে জমি বিক্রেতারা সালিস ছেড়ে বাড়ির দিকে টানপায়ে হাঁটে। সালিসের কিছু ব্যক্তি তাদের পিছু নেয়। সাদ আলী ও হোসেন আলী দ্রুত সরে পড়লেও সামনে পড়ে তাদের চাচাতো ভাই শহিদ। তাকে তার বাড়ির উঠোনেই পিটিয়ে দলেচটকে হত্যা করে সালিসের উত্তেজিতরা।
নিহত শহিদের স্ত্রী রোসিলা খাতুন ও শহিদের ভাতিজা সাইদুর রহমান গতকাল দুপুরে অভিযোগ করে জানায় জমির ক্রেতা ছোট টাকার বিনিময়ে এলাকার চিহ্নিত ফেনসিডিল ব্যবসায়ী মহাবুল এবং একই গ্রামের বহু অপকর্মের হোতা মোজাম্মেল, টেংরা, আতিয়ার, মধু, কটা, দুদু, রসুলসহ কয়েকজনকে টাকার বিনিময়ে সালিসে আনে। এই ভাড়াটে গুন্ডারাই শহিদেকে হত্যা করেছে। অভিযোগকারীরা আরো জানায়, গ্রামের মাতবরদেরকে আগে থেকেই ম্যানেজ করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, শহিদ ছিলেন শাদাসিদে। এলাকাবাসী ছোটসহ খুনিদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে গতকাল বুধবার বেলা তিনটার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শহিদের লাশ গ্রামে পৌঁছুলে এক হৃদয় বেদনাদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শহিদের স্ত্রী রোসিলা খাতুনের বুকফাটা আর্তনাদে গোটা এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নিহত শহিদের লাশ দেখতে অসংখ্য নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। গতকাল বাদ আছর জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে শহিদের লাশ দাফন করা হয়। নিহত শহিদের স্ত্রী রোসিলা খাতুন বাদী হয়ে গতকাল সকালে আলমডাঙ্গা থানায় ছোট, মহাবুল, মোজাম্মেল, টেংরা, কটা, মধু, আতিয়ার, নজরা, দুদু, ধোনা, রসুলের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর শহিদের ভাতিজা অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যোন আবুল কালামের নাম বললেও গতকাল অবশ্য তারা তার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগ করেন।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মাথাভাঙ্গাকে জানান, ছোটসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি অচিরেই ঘাতকদের গ্রেফতার করা হবে। অপরদিকে নাগদাহ’র সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, আমি সালিসসভায় ছিলাম, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টাও করি। সালিসের মাঝে কিছু উশৃঙ্খল লোকজন কাউকে তোয়াক্কা না করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে।