সুরমায় ট্রলারে অগ্নিকাণ্ডে ১১ লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার মধ্যবর্তী সুরমা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১ জনে উন্নীত হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১১ জনের লাশ উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল। উদ্ধার করা হয়েছে আহত শতাধিক ট্রলারযাত্রীকে। তাদের সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে যাত্রীবাহী ট্রলারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছাতক-দোয়ারায় সুরমা নদীর দু তীরজুড়ে এখন বইছে শোকের মাতম। জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় কোম্পানিগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনাগামী ইঞ্জিনচালিত কাঠবডির নৌকা দেড়শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছাতকের কাস্টমঘাট থেকে ছেড়ে যায়। রাত প্রায় ৮টায় বেতুরা ও প্রতাবপুর এলাকায় পৌঁছুলে নৌকায় আকস্মিক এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রান্নার সময় পাম্পের চুলা বিস্ফোরণ ঘটলে নিচে থাকা ডিজেলের ট্যাঙ্কিতে আগুন ধরে যায়। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই গোটা নৌকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নৌকায় ঘুমন্ত যাত্রীরা প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে। যাত্রীদের আর্তচিৎকার ও আহাজারিতে দু পাড়ের মানুষ ছুটে আসে নদীর পাড়ে। আগুন নেভাতে ও যাত্রীদের উদ্ধার করতে গ্রামবাসী ঝাঁপিয়ে পড়ে। অর্ধদগ্ধ অবস্থায় নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের আফিয়া, রফিকুল, মুক্তাসহ ২০ জনকে গ্রামবাসী উদ্ধার করে রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এছাড়া জীবিত অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত শিশুসহ ১১টি দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হলেও আরও অর্ধশতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রথম দফায় সোমবার রাতে মহিলা, শিশুসহ ৩ জনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় গ্রামবাসী। গতকাল অগ্নিদগ্ধ নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুসহ ১১টি জনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে ৬ শিশু, ১ মহিলা ও ৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের লাশ রয়েছে। অগ্নিদগ্ধ লাশগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

নৌকায় ইটনা ও মিঠামাইন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৪০ যাত্রী ছিলেন। আরও বেশ কিছু যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রাজিব আহমদ, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনুর আক্তার পান্না, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানসহ উভয় উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সকাল থেকে ছাতক ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার জাবেদ আহমদের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানান, এভাবে রাতের বেলা যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।