স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আচারণবিধি ভঙ্গকারীকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে মাঠে থাকছে নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি দু ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য ১ হাজার ৭৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে প্রথম ধাপের ৯৮ উপজেলার ৩৯২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৮ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। দ্বিতীয় ধাপের ১১৭ উপজেলার জন্য ৪৬৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১৭ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তারা নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল টিম হিসেবে টহল দেবেন। এজন্য সম্প্রতি আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তাদের সম্মুখে কিংবা উপস্থিতিতে কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি বিধি ভঙ্গ করলে এবং দায় স্বীকার করামাত্রই শাস্তি দিতে পারবেন তারা। মোবাইল টিমের দায়িত্বে থাকা এসব ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ড দিতে পারবেন।
অপরদিকে, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম তদন্তে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক সাজা ও অর্থদণ্ড দিতে পারেন। এসব কর্মকর্তা নির্বাচনী এলাকায় নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন কিংবা গুরুতর অপরাধ করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অনিয়ম তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডেকে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানির করেন। অভিযোগের সত্যতা মিললে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ ৭ বছর সাজা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড দিতে পারবেন। চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতিটি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ভোট গ্রহণের দু দিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের পর দিন পর্যন্ত প্রতিটিতে তিনজন নির্বাহী ও একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের তদারকি করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম তদন্তে কাজ করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার মোহম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেন, উপজেলা নির্বাচন সময় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কয়েক ধাপে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছে কি-না স্থানীয়ভাবে কমিটি করে দেয়া হবে এবং কমিশন থেকেও এজন্য পর্যবেক্ষণ করা হবে। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নির্দলীয় এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রচারণা চালানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেনা মোতায়েন নিয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, উপজেলা পরিষদের প্রতিটি ধাপে নির্বাচনের আগে পরে দু দিন ও নির্বাচনের দিনসহ মোট পাঁচদিন সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ৬ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন বিষয়ে শাহনেওয়াজ বলেন আগামী সপ্তাহে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য শপথ গ্রহণের পর বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের ২১ দিন সময় দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে তারা কোনোও জোটে যাবেন কি-না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সে সময় শেষ হবে। তারপরই আমরা নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।