যশোরের অভয়নগরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক সন্ত্রাস : নাগরিক তদন্ত কমিটি

 

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের অভয়নগরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক সন্ত্রাস। যশোর-সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে এসে নাগরিক তদন্ত কমিটি শুক্রবার বিকেলে যশোরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ অভিমত দেন। নাগরিক তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিরা বলেন, সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এর নামে নিরপরাধ বহু মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে। গোটা সাতক্ষীরা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, যশোরের অভয়নগর মালোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা প্রকৃত ঘটনা বলতে চান। কিন্তু তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। কেউ কোনো সত্য কথা বলে ফেললেই, প্রভাবশালীরা ধমক দিয়ে তাদের থামিয়ে দিচ্ছে। রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমি পাকিস্তান আর্মির বর্বরতা দেখেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে এমন বর্বরতা চালাতে পারে, সাতক্ষীরা না গেলে তা বোঝা যাবে না। সেখানে যৌথবাহিনীর নামে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ খুন করা হচ্ছে। খুনের শিকার মানুষেরা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। সন্ত্রাসের অভিযোগ তাদের নামে নেই। তাদের সবাই প্রায় নিরীহ। এ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়া দরকার বলে অভিমত দিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী সাতক্ষীরার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গোটা সাতক্ষীরা এখন যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। চারিদিকে কান্নার রোল, স্বজনহারাদের আহাজারি। গ্রামে গ্রামে বহু কবর, যারা যৌথবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের স্বজনরা জানেন না, কী কারণে অস্ত্রধারী বাহিনী এভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। এ সময় যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে যে খুন-খারাবির অভিযোগ উঠছে তা যেন আর না হয় সে দাবি জানান তদন্ত কমিটির এই সদস্য সচিব। তালায় যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত আজহারুল ইসলামের স্ত্রীর বরাত দিয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘তারা জানতে চেয়েছেন- পুলিশ কি মানুষ হত্যার জন্য, নাকি মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য? এ রাষ্ট্র কার জন্য? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নেই, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের? যশোরের মালোপাড়া সম্বন্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবের এই যুগ্মসম্পাদক বলেন, সেখানে হিন্দু-মুসলিম চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছেন চাপাতলার মানুষেরা। ৫ জানুয়ারির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ছিলো না। ক্ষতিগ্রস্ত সুনীতি বিশ্বাস তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন- গফফার নামে এক যুবলীগ নেতা তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, সদস্য জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু প্রমুখ।