লেখাপড়া কি শুধু চাকরির জন্য?

 

পরিবারের অভিভাবকদের পছন্দই বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পছন্দ হিসেবে মেনে নেয়া বাঙালি সমাজের সামাজিক প্রথা বা রেওয়াজ এখনও বিদ্যমান। তবে তা যে সেকেলে এবং বর্তমানে বর্জনের তালিকায় যেতে বসেছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। বিয়ের আগে বর-কনের মধ্যে কিছুটা হলেও বোঝাপড়া, জানা-শোনা থাকলে দাম্পত্য দমবন্ধের বদলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছন্দময় হয়। এ কারণেই মূলত বিয়ের আগে পাত্র-পত্রীর পূর্বপরিচয়কে ক্ষতিকর বলে অভিভাবকেরা আগের মতো অতোটা নিষিদ্ধ বলে দাবি করতে পারছেন না। শুধু কি তাই? পূর্বে প্রেমের প্রস্তাবের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। দিস্তা দিস্তা কাগজ আর কালি খরচের পত্র-পুস্তকের ভাঁজেই থেকে গেছে। পৌঁছায়নি। এখন? বদলে গেছে জামানা। সেলফোনে মিসকলেই ঘটে যাচ্ছে অনেক ঘটনা। বিয়ের আগে বাসরও যেন গা-সওয়া। তা না হলে চাঁপাইয়ের সম্মান শ্রেণির ছাত্রীকে উপযুক্ত সম্মান ছাড়াই চুয়াডাঙ্গা থেকে ফিরতে হলো কেন? সহজ জবাব, তিনি সম্মান শ্রেণির ছাত্রী হলেও বর্তমান সমাজ সম্পর্কে অসচেতন। সম্মান শ্রেণিতে পড়লেও তার কোনো দামই থাকে না যদি সম্মান রক্ষার মতো জ্ঞান না হয়। প্রকৃত শিক্ষা অবশ্যই সচেতন করে।

অবশ্যই প্রতারকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অপরাধ করে পার পেলে তার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়, সমাজে অপরাধ প্রবণতা ছড়ায়। বাবলু যদি আবুল কালাম আজাদ বলে পরিচয় দিয়ে যুবতীর সম্ভ্রম লুটে পার পায়, কৌশলে হুমকিতে যদি মমতাকে আইনের আশ্রয় নিতে নিরুৎসাহিত করে ফেরানো যায় তাহলে ধরেই নিতে হয়, আইন প্রয়োগে আন্তরিকতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। যে ঘাটতির বোঝা সমাজকেই বহন করতে হয়। কে এই আবুল কালাম আজাদ, যে নিজেকে হাসপাতালের টেকনিশিয়ান বলে পরিচয় দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্মান শ্রেণির ছাত্রীকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে সর্বনাশ করেছে। পত্রিকায় তার ছবি প্রকাশের পর আবুল কালাম আজাদের পরিচয় গোপন থাকেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছানো যুবতীর সামনে হাজির হলেও তাকে ধরে পুলিশে দেয়ার মতো হিম্মত কেউ দেখায়নি। দেখাবে কে, তার সাথে যারা ছিলো তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো অবস্থা কি আছে। এরপরও মোবাইলফোনে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তাতে সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত প্রতারিত যুবতীকে হতাশা নিয়েই বাড়ি চাঁপাইনববাগঞ্জে ফিরতে হয়েছে। ফেরার সময় তিনি নিশ্চয় বলেছেন, বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাস করেই ঠকলাম। বিশ্বাস করার আগে কেন তিনি আরো সচেতন হলেন না?

লেখাপড়া কি শুধু চাকরির জন্য? যে লেখাপড়া সচেতন করতে পারে না সেই লেখাপড়ার দরকার কী? চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্মান শ্রেণির ছাত্রী নিশ্চয় বলবেন, সচেতন ছিলাম। বিশ্বাস স্থাপনের মতো কথা বলেছিলো বলেই তো বিশ্বাস করেছি। হারিয়েছি সম্ভ্রম! প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ এখনও হাতছাড়া হয়নি। নাম ঠিকানা কর্মস্থল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়াও প্রতারণা। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ঢাকায় ডেকে নিয়ে হোটেলে অবস্থান এবং আরো কিছুকে কি দেশে প্রচলিত আইন সমর্থন করে? অবশ্যই না। যুবতীর সাথে শুধু প্রতারণাই করেনি, আইনের দৃষ্টিতে কঠিন শাস্তির অপরাধও করেছে। অপরাধীর শাস্তি হওয়া দরকার। এজন্য প্রয়োজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের। বিশেষ করে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা প্রয়োজন। যুবক যাদেরকে সাথে নিয়ে কৌশলে হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আইনগত সুযোগ রয়েছে। আইন থাকলেই হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হবে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই সমাজ থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর করতে হবে। একই সাথে যোগাযোগ মাধ্যমের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ধকল সামলানোর মতো সচেতনতাও প্রয়োজন।