মুখোশপরা অস্ত্রধারীদের তাণ্ডব : বোমার আঘাতে ও কুপিয়ে আহত নারীসহ ১০

দামুড়হুদার গোবিন্দপুরে মধ্যরাতে দুর্বৃত্ত হানা : একের পর এক বোমা হামলাসহ মারপিটে সন্ত্রস্ গোটা গ্রাম

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার গোবিন্দপুরে মুখোশপরা একদল অস্ত্রধারী তাণ্ডব চালিয়েছে। গতরাত পৌনে ১২টার দিকে বোমা হামলা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নারীসহ কমপক্ষে ১০জনকে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। ডাকাতির জন্য গ্রামে ঢুকে প্রতিরোধের মুখে তারা তাণ্ডব চালিয়েছে নাকি আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর বোমা হামলাসহ কুপিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি গ্রামের সাধারণ মানুষ।

দামুড়হুদার পল্লিতে একের পর এক দুবৃত্ত হানা, চাঁদাবাজচক্রের অপতৎপরতা ও ডাকাতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। চরম আতঙ্ক ছড়ালেও পুলিশ তেমন কিছুই করতে পারছে না। ফলে দামুড়হুদা জনপদের সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাদের চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে তারা হলেন- বাবুল আক্তার, তার স্ত্রী হোসনে আরা ডলি, হারুন-অর রশিদ, বকুল ও ইস্রাফিল।

আমাদের কার্পাসডাঙ্গা ও ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার গোবিন্দপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে। কয়েকজন বসে ছিলেন এজের আলীর চা দোকানে। দোকানটি তখন বন্ধের প্রস্ততি চলছিলো। রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে ১২-১৫ জনের একদল অস্ত্রধারী হানা দেয়। দোকানীসহ দোকানে থাকা কয়েকজনকে মারধর শুরু করে। মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া দিয়ে প্রবেশ করে। ওই পাড়াতেই এজের আলীর চায়ের দোকান। অস্ত্রধারীরা আকস্মিক এজের আলীর ওপর হামলা চালায়। তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে বেদম মারধর করে তাকে। দোকানের মাচায় বসে থাকা মইনুল হোসেনকেও মারধর করে তারা। এরপর হামলাকারীরা গ্রামের তেমাথা রাস্তার কাছে পৌঁছুলে গ্রামবাসী প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা একের পর ৬টি বোমা নিক্ষেপ করে। দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয় গ্রামের লাল মোহাম্মদের বাড়িতে। বাড়ির ছাদে নিক্ষেপ করা বোমার আঘাতে আহত হন বাবুল আক্তার (৪২), স্ত্রী হোসনে আরা ডলি (৩৫) ও ছেলে শাওন (১৫)। এছাড়া বোমার আঘাতে লাল মোহাম্মদের ছেলে হারুন অর রশিদ (৩২) গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের মুখে গ্রামবাসী সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। একের পর এক হামলা ও বোমার বিস্ফোরণে গোটা গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙে। তারা রাস্তায় বের হয়ে পুনরায় সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। হামকলাকারীদের সামনে পড়ে গ্রামের মনিরুদ্দিনের ছেলে বকুল (২৫) ও মৃত বরকত মণ্ডলের ছেলে ইসরাফিল (৪৫)। এদেরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের পরনে হাফপ্যান্ট ও লুঙ্গি ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ ছাড়া সকলের মুখ ছিলো বাঁধা। গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর সন্ত্রাসীরা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কী কারণে এ হামলা চালানো হয়েছে তা অবশ্য কেউ বলতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা গ্রাম থেকে সটকে পড়লে থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে। গ্রামের কেউ কেউ বলেন, ডাকাতির জন্যই ওরা গ্রামে ঢোকে। প্রতিরোধের মুখে তাণ্ডব চালায়। পক্ষান্তরে এ মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে কেউ কেউ বলেন, কেন হামলাকারীরা ওভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে তা বলা কঠিন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানার ওসি (তদন্ত) ফকির মো. আজিজুর রহমান এবং এসআই রবিউল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গোবিন্দপুরে পৌঁছান। গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে ডাকাতদলের সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। তবে তা সফল হয়নি। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতনমহল। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। সম্প্রতি দামুড়হুদার বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনায় বিষিয়ে উঠেছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। চরম নিরাপত্তাহীনতায় তাদের দিন কাটছে।