কাকে বিশ্বাস করবেন? বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে তারা যে মুরগির মাংসে অজ্ঞান করা ওষুধ মিশিয়ে সর্বনাশ করবে তা কীভাবে বুঝবেন? ওরা যে প্রতারক তা প্রতারণার আগে আচরণ দেখে কি বোঝার জো আছে? হাট-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, বাস-ট্রেনে অপিরিচিত কাউকে বিশ্বাস করেছেন তো ঠকেছেন। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আশপাশেই ঘুরঘুর করছে প্রতারকচক্র। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন গ্রামের সরলসোজা মানুষ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে শয্যার পাশে বসেই হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা, মূল্যবান মালামাল। মোবাইলফোনে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দেয়ার লোভের টোপে সরলসোজা লোভী প্রকৃতির অনেককেই পথে বসিয়ে ছাড়ছে প্রতারকচক্র।
পাশাপাশি বসবাস। কথা না বলে কি থাকা যায়? কথা বলার সুযোগে বাড়তি খাতির হতেই পারে। কে প্রতারক, কে অপরাধী তা দেখেই বাড়ি ভাড়া দেয়া দরকার। এজন্য নিদের্শনাও রয়েছে। এক সময় নাগরিক পরিচয়পত্র ছিলো না। এখন আছে। বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে ভোটার আইডিকার্ডসহ তার কর্মস্থল সম্পর্কে ন্যূনতম খোঁজ নেয়া বাড়িওয়ালারই দায়িত্ব। ন্যূনতম এ দায়িত্ব পালন করলে শুধু প্রতারণা থেকে নয়, বড় ধরনের বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে নিকটস্থ পুলিশ কেন্দ্রকে অবহিত করারও বিধান প্রচলিত। যদিও তার প্রচলন নেই বললেই চলে। হাট-বাজারে, বাস-ট্রেনে, রাস্তা-ঘাটে অজ্ঞানপার্টির ছড়াছড়ি। অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, পুলিশ সদস্যরাও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ প্রাণহানির ঝুঁকির মধ্যেও পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞানপার্টির অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন বাড়ছে। অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে না পারলে যা হওয়ার মূলত তা-ই হচ্ছে। হাসপাতালে রোগী ও রোগীর লোকজনের মালামাল মাঝে মাঝেই চুরি হয়। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক রোগীর মোবাইলফোন চুরি করে সটকানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়া একচোরের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে তারা কীভাবে চুরির সুযোগ সৃষ্টি করে। রোগী হাসপাতালে এলে দেখে বুঝে নেয়, কোন রোগী গ্রামের এবং সরল প্রকৃতির। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। খাতির জমিয়ে পাশে থেকেই দেখে নেয় কোথায় কীভাবে টাকা রাখা হচ্ছে। মূল্যবান মালামালগুলোও থাকছে কোথায়। সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। এরা মাদকাসক্ত। মোবাইলফোনে জিনের বাদশা বলে কোটিপতি বানিয়ে দেয়ার লোভ এবং বড়ধরনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে যে প্রতারকরা প্রতারণা করে তারা মূলত লোভী এবং অসচেতনতার অন্ধকারাচ্ছন্ন ভীতুদেরই খুঁজে নেয়।
প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা রুখতে না পারলে সমাজ থেকে বিশ্বাসের অবশিষ্টটুকুও উবে যাবে। প্রতারকচক্রের মূল অস্ত্র অবশ্যই অসচেতনতা। সতর্ক হলে প্রতারকচক্র প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারে না। প্রতারণার কবল থেকে মুক্ত হতে হলে বাড়তি সতর্কতার বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদেরও প্রতারকচক্র বিরোধী লাগাতার অভিযান চালানো দরকার। শুধু থানা ও জেলা ভিত্তিক নয়, আন্তঃজেলা সম্মিলিত বিশেষ দল গঠনের মাধ্যমে কৌশলে অভিযান পরিচালনা করলে বাস-ট্রেন, রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজারে প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা হ্রাস পেতে বাধ্য। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও রোগীর লোকজনের মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখি উদ্যোগ প্রয়োজন।