চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর স্টেশন পরিদর্শনকালে আশ্বাস দিলেন উন্নয়নের
হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: দর্শনা হল্টস্টেশন থেকে সরকার প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব আদায় করলেও উন্নয়নের নূন্যতম ছোঁয়া লাগেনি। এ স্টেশনে প্রতিদিন প্রায় সোয়া লাখ টাকা টিকিট বিক্রি হচ্ছে অথচ সার্বিক সমস্যার অন্ত নেই। এতোদিনেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকায় এবার দর্শনা হল্টস্টেশন উন্নয়নের দিকে নজর দিলেন এ আসনের এমপি হাজি আলী আজগার টগর। এমপি টগর এলাকার ট্রেনযাত্রীদের কষ্ট লাঘবে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দর্শনা হল্টস্টেশন পরিদর্শনে যান। এ সময় স্টেশন এলাকার লোকজন বলেন, ১৮৬২ সালে বর্তমানে দর্শনা আর্ন্তজাতিক স্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়। সে সেময় ঢাকা-কোলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলা চালু ছিলো। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এলাকার মানুষকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথে যাতায়াতের জন্য ভারতের ভেতর দিয়ে বেনাপোল-যশোর হয়ে খুলনায় প্রবেশ করতে হতো। সে সময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেলপথ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এ অঞ্চলের মানুষের সাথে খুলনার যোগাযোগ একেবারেই ভেঙে পড়ে। খুলনার সাথে যোগোযোগের লক্ষ্যেই ১৯৫২ সালে নির্মাণ করা হয় দর্শনা হল্ট। দর্শনা হল্টস্টেশন প্রতিষ্ঠার পর এক সময়ের দর্শনা গোয়ালাচাঁদপুর পরিচিতি পেতে থাকে হল্টচাঁদপুরে। দর্শনা হল্টস্টেশনের বয়স এখন ৫০ পেরিয়ে গেছে। সরকার এ স্টেশন থেকে প্রতিবছর যে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়ে থাকে তা অতিক্রম করে সরকারের খাতায় জমা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব। প্রতিষ্ঠালগ্নে স্টেশনে ২/১টি ট্রেন চলাচল করতো। প্রতিষ্ঠাকালে টিনের ছাপড়ায় স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ১৯৬৯ সালের দিকে পাকাকরণ করা হয়। কালের অবর্তে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। বেড়েছে জনসংখ্যা। সেই সাথে বেড়েছে ট্রেনযাত্রী। কিন্তু দর্শনা হল্টস্টেশন রয়ে গেছে সেকেলের অবস্থায়। কোনো অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়নি। পাকাকরণকালে এ স্টেশনে ২শ যাত্রীর জন্য একটি সেড নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ২৩টি ট্রেন চলাচলা করছে। প্রতিদিন টিকিট বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে সোয়া লাখ টাকার। ফলে প্রতিবছর টিকিট বিক্রির প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা জমা পড়ছে সরকারের রাজস্ব খাতায়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার ট্রেনযাত্রীর সমাগম ঘটে এ স্টেশনে। অথচ আজ পর্যন্ত স্টেশনের সমস্যার যেন অন্তঃনেই।
এ স্টেশনে রয়েছে একটি গণশৌচাগার। তাও আবার ভিআইপিদের জন্য। অথচ অসংখ্য যাত্রীর মধ্যে ভিআইপি যাত্রীর জন্য সব ট্রেন মিলে টিকিট বরাদ্দ ৮টি। যে কারণে গণশৌচাগার তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সাধারণ যাত্রীদের জন্য কোনো প্রকার গণশৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। মহিলা যাত্রীরা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোতে গিয়ে নিজেদের সমস্যা দূরীকরণ করতে পারলেও পুরুষ যাত্রীদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। সম্প্রতি যাত্রীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্টেশনঘেঁষা বাড়িগুলোর শৌচাগারগুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। স্টেশনে কোনো প্রকার বাউন্ডারি পাঁচিল, বিদ্যুত বাতি না থাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে অবস্থার। প্রায়ই ঘটে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ স্টেশনে ৩ জন বুকিং মাস্টারের মধ্যে পরিপূর্ণতা থাকলেও, ৩ জন পোর্টারের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১ জন। ১ জন সুইপার থাকলেও তাকে দেখা যায় না। যার কারণে স্টেশন এলাকা থাকে নোংরা অবস্থায়। স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রধান সড়ক থাকলেও এখানে নেই ওভারব্রিজ। হুইলগেটের ব্যবস্থা থাকলে বেশির ভাগ সময় থাকে অকেজো। এ কারণে প্রায় সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয় যানবাহন ও পথচলাচলকারীদের। খুলনা থেকে দর্শনায় প্রবেশের সময় স্টেশনের কোনো নামফলক না থাকায় যাত্রীদের স্থান চিনতে চরম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। দর্শনা হল্টস্টেশনের কোনো স্থানেই নেই স্টেশনের নামের সাইনবোর্ড। স্টেশনে লোকবল সংকট, বিশুদ্ধ পানিসহ সমস্যার যেন অন্ত নেই। দর্শনা হল্টস্টেশন জিআরপি ফাঁড়ি থাকলেও সে ফাঁড়িতে একজন এএসআইসহ ৪ জন কনস্টেবল রয়েছে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জকে অধিকাংশ সময় অফিসিয়াল কাজকর্মে ছুটতে হয় বিভিন্ন স্থানে। এরপরও থাকে ভিআইপি ডিউটির পালা। ফলে স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে একেবারেই অপ্রতুল। পরিদর্শনে এসে এমপি আলী আজগার টগর স্থানীয় ও উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে এ রকম অভিযোগ শুনে তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের মাধ্যমে এ স্টেশনের সার্বিক উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে যা যা করা প্রয়োজন তা দ্রুতগতিতে করা হবে ইনশাল্লাহ।
এমপি টগর স্টেশন পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন- আ.লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, গোলাম ফারুক আরিফ, আজিজুল জোয়ার্দ্দার, হবা জোয়াদ্দার, মোস্তাফিজুর রহমান, বিল্লাল হোসেন, যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোট, অ্যাড. আজিজুর রহমান বাবু, শেখ আসলাম আলী তোতা ইকবাল হোসাইন, জয়নাল আবেদনী নফর, হাকিম, সাজাহান মোল্লা, মামুন শাহ, সোলায়মান কবির, রফিকুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, ফারুক হোসেন, ফয়সাল, অহিদুল ইসলাম, মাসুম মণ্ডল, ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ববি, নাহিদ পারভেজ প্রমুখ।