স্টাফ রিপোর্টার: সিনেমার মতোই গল্পের মতো ১৫ গজ দূরে একটি ঘর থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের ভল্টরুম থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা লোপাট করেছে দুবৃত্তরা। গতকাল রোববার দুপুরে ভল্টরুম খোলার পর এ ঘটনা ধরা পড়ে। ব্যাংকের ১৫ গজের মধ্যে গত দেড় বছর ধরে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থানকারী সোহেল নামধারী অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ এরকমই তথ্য পেয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে টাকার প্রয়োজনে ব্যাংকের সিনিয়র ক্যাশ কর্মকর্তা মোহসিনুল হক তালা খুলে ভল্টরুমে প্রবেশ করে টেবিলের ওপর রক্ষিত টাকা না পেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে সুড়ঙ্গ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে অন্য কর্মকর্তারাও এগিয়ে গিয়ে এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তারা ব্যাংক থেকে বেরিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাশের একটি টিনশেড বাসায় সুড়ঙ্গ পথের উৎস খুঁজে পান। এ সময় দেখা যায়, প্রায় আড়াই ফুট বাই আড়াই ফুট ব্যাসের এ সুড়ঙ্গ পথ যাতে ভেঙে না পড়ে এ জন্য কাঠ দিয়ে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা করে ওইপথে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা নিয়ে আবারও ওইপথে ফিরে এসে গাঢাকা দিয়েছে দুর্বৃত্ত বা দুর্বৃত্তরা। কেননা এ ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তির সহযোগিতা ছিলো বলে পুলিশ ধারণা করছে।
এ ব্যাপারে প্রকৌশল অধিদফতরের একজন সিনিয়র প্রকৌশলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, নকশা ও খননকার্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া এ ধরনের সঠিক মাপের সুড়ঙ্গ নিপুণভাবে তৈরি করা সম্ভব নয়। এছাড়া ভল্টরুমের অবস্থান প্রত্যক্ষ না করে সঠিক মাপজোক ছাড়া একেবারে লক্ষ্যে পৌঁছার কথা নয়।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঘটনার সব দিক বিবেচনায় রেখেই তাদের তদন্ত কাজ চলছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শ শ মানুষ এসে ব্যাংক ও ওই বাসার সামনে ভিড় জমায়। পুলিশ ওই বাসা ও ব্যাংকের ভল্টরুম জব্দ করে তদন্তকাজ শুরু করেছে। সোহেল নামধারী অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক সোনালী ব্যাংকের পূর্বদিকে পায়ে চলা রাস্তার সীমানায় অবস্থিত মরহুম আমিনুল হকের বাসায় প্রায় দেড় বছর ধরে ভাড়াটে হিসেবে অবস্থান করছিলো। সে দেড় বছর ধরে এখানে থেকে কি করতো কিংবা কেন অবস্থান করছিলো এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি।
ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনের সময় পাশের বাসার এক কিশোর জানায়, সোহেল নামের ওই ভাড়াটিয়া ঘরে দরজা বন্ধ করে প্রায় সময়ই খুটখুট শব্দ করে কাঠের কাজ করতো। সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের ডিজিএম শেখ মোহাম্মদ আমানউল্লাহ ও ম্যানেজার মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া জানান, এখনও হিসাব চলছে। এজন্য চুরি যাওয়া টাকার পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এর পরিমাণ ১৬ কোটি ৪০ লাখ হতে পারে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, সিনিয়র এএসপি (হেডকোয়ার্টার), সদর সার্কেলের এএসপি শাহান শাহ, কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেকসহ সিআইডি, ডিবি পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ বিভিন্ন সূত্র ধরে পাশের বাসার ভাড়াটে সোহেল পরিচয়ধারী সেই যুবককে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।