স্টাফ রিপোর্টার: লোকবল ইঞ্জিন আর বগি সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে রেলওয়ের কার্যক্রম। এলোমেলো হয়ে পড়ছে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি। ট্রেন চলাচলে সরাসরি সম্পৃক্ত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারীদের প্রায় ১৫ হাজার শূন্যপদ পূরণে কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এদিকে ১৬ হাজার পদশূন্যের বিপরীতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে দায়েরকৃত ৩৫ মামলায় ৫ হাজার পদের নিয়োগ স্থগিত রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। বন্ধ থাকা ১৪৭টি স্টেশন শুধু স্টেশন মাস্টারের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। স্টেশন মাস্টারের অভাবে বন্ধ থাকা স্টেশন চালু করা যাচ্ছে না। গার্ড আর চালকের অভাবে ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। গত সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ সালে নেয়া ৩৪টি প্রকল্পের অধিকাংশ প্রকল্প শেষ হয়েছে। চীন থেকে আনা ২০ জোড়া ডিজিটাল সিস্টেম নতুন ডেমো ট্রেনসহ জোড়াতালি দিয়ে নতুন ট্রেনগুলো চালু করা হলেও লোক নিয়োগে সফলতা উদ্বেগজনক। বরং লোক নিয়োগে চরম দুর্নীতি আর অবৈধ অর্থের লেনদেনে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ, পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে জিএমসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার চাকরিচ্যুত হয়। ২০১০ ও ২০১২ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১ হাজার ৩৭৪টি পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও এ পর্যন্ত নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৮৩২টি। যার মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে ১১৫৪ ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৬৭৮ জন। সূত্রে জানা যায়, বর্তমান রেলমন্ত্রী দায়িত্ব পাওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২শ জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখ যে, এসব নিয়োগ নতুন করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হয়নি। ২০১০ সালে নেয়া জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির পদে থাকা লোকজনই ২০১৩ সালে নেয়া হয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের ও বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক লোক নিয়োগের মাধ্যমে রেলওয়েকে কার্যত উন্নত শিখরে মুড়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ৯৪ জন স্টেশন মাস্টার ও ৮১ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার উত্তীর্ণ হলেও তাদের চাকরি এখনও হয়নি। শুধু বিএনপি সরকারের আমলে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় তাদেরকে চাকরিতে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। ফলে নিয়োগবঞ্চিত এসব প্রার্থী বিভিন্ন সময় শুরু হওয়া বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া এক এক করে হাইকোর্টে ৩৫টি রিট মামলা দায়ের করেন। এসব মামলার কারণে প্রায় ৫ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে আছে। মামলাগুলো চলমান থাকায় এখনও পর্যন্ত কোনো স্টেশন মাস্টার ও সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে লোক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৬ সালে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়া ৯৪ জন স্টেশন মাস্টার ও ৮১ জন সহকারী স্টেশন মাস্টারকে নিয়োগ দান করলেই কেবল তারা মামলাগুলো তুলে নেবেন। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরে গেলেও তাদের স্থলে লোক নেয়া হচ্ছে না। চুক্তি ভিত্তিতে গার্ড, চালক নিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে চুক্তি ভিত্তিতে নেয়া গার্ড ও চালক কোনো প্রকার অন্যায় কিংবা অনিয়ম করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন। রেল মন্ত্রণালয় নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৩৭টি পদে ৭ হাজার ২৭৫ জন লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের এক রায়ে ৩০টি পদে লোক নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। বাকি ৭টি পদে মাত্র ২০৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় রেলওয়ের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ইঞ্জিন ও ৱ্যাক সঙ্কট। বাড়ছে রেল লাইনের ত্রুটিও। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ট্রেন চলাচলে মাঠ পর্যায়ে সেসব কর্মচারী দরকার তাদের বেশির ভাগ পদই শূন্য রয়েছে। রেলওয়ে বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে কারিগরি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ শূন্যপদের সংখ্যাই বেশি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির টেকনিক্যাল পদ খালি রয়েছে ১৪ হাজার ৬৯২ জনের। রেললাইন মেরামতে নিয়োজিত লাইন ক্লিয়ার ওয়েম্যানের পদ খালি রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। চালকরা অবসরে গেলে আর নতুন লোক নেয়া হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির পদ রেলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এসব পদে দীর্ঘদিন ধরে নতুন করে লোক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।