সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব থেকেও বিতর্কিতরা বাদ

স্টফ রিপোর্টার: মন্ত্রিসভার মতো জাতীয় সংসদ কার্যক্রম পরিচালনায়ও পরিবর্তন এসেছে। চিফ হুইপ ও হুইপ পদে নিয়োগ পেয়েছেন নতুন মুখ। একজন হুইপ ছাড়া নবম সংসদের চিফ হুইপ ও অন্য হুইপদের বাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দশম জাতীয় সংসদে আসম ফিরোজ চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আগের সংসদে তিনি হুইপ ছিলেন। এ ছাড়া নতুন পাঁচ হুইপ হলেন আতিউর রহমান, ইকবালুর রহিম, মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও শহীদুজ্জামান সরকার। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল শুক্রবার চিফ হুইপ ও পাঁচ হুইপ নিয়োগ অনুমোদন করেছেন। চিফ হুইপ আসম ফিরোজ পটুয়াখালী-২ আসন থেকে মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হন। হুইপদের মধ্যে আতিউর রহমান চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদেও নতুন মুখ আসছেন। ফজলে রাব্বী ডেপুটি স্পিকার হচ্ছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। স্পিকারকে হচ্ছেন, তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও আলী আশরাফের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। আবদুল মতিন খসরুর নামও বলছেন কেউ কেউ। সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মন্ত্রিসভার মতো গত সংসদের চিফ হুইপ ও কয়েকজন হুইপও নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন। ক্ষমতার পাঁচ বছরে তারা অস্বাভাবিক উপায়ে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আছে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালের তুলনায় দ্রুতগতিতে তাদের সম্পদ বেড়েছে বহু গুণ। চিফ হুইপের দায়িত্ব থেকে বাদ পড়া আব্দুস শহীদ টানা ১৫ বছর হুইপ এবং চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি সংসদে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ছিলেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় গত সংসদেও তিনি চিফ হুইপ ছিলেন।
মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত পাঁচবারের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ নবম সংসদে চিফ হুইপ হওয়ার পর এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েন। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচ বছরে আব্দুস শহীদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৯ টাকার। পাঁচ বছর আগেও তার স্ত্রীর কোনো সম্পদ ছিলো না। এখন স্বর্ণই আছে ১০০ ভরি। আরও আছে নগদ টাকা, অকৃষি জমি, বন্ড-ঋণপত্র ও শেয়ার। কেবল সম্পদ নয়, নামকরণেরও কাঙাল আব্দুস শহীদ। তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারি টাকায় নির্মিত দুটি সেতু ও সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছে তার নামে। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পরিবারকেন্দ্রিক করার অভিযোগ আছে আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে। তার ছোট ভাই কমলগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আরেক ছোট ভাই ইফতেখার আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক। অপর ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ বিআরডিবি ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি স্থানীয় ঠিকাদার সমিতিরও সভাপতি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন এই ইমতিয়াজ। আব্দুস শহীদ এবার কমলগঞ্জে বাগানবাড়ি করেছেন। এটির নির্মাণকাজে তিনি সরকারি চা-বাগানের শ্রমিকদের ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

এ ছাড়া আগের হুইপদের মধ্যে নূর-ই-আলম চৌধুরী এবং শেখ আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া হলফনামায় এর সত্যতা পাওয়া যায়। এদিকে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন কিছুটা বিলম্বের সম্ভাবনা থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন-প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নারী প্রার্থীদের জীবন-বৃত্তান্ত দেয়া হয়েছে। তিনি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন নারী আসনের তফশিল ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগ এবার ৩৬টি সংরক্ষিত নারী আসন ভাগে পাচ্ছে। এসব আসনের নির্বাচনের জন্য কয়েকটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন দলীয় নীতিনির্ধারকেরা। অন্তত ২০টি আসন জেলা নেত্রীদের দেয়া হবে। পুরোনোদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।