ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টেছে করিমন : ভেঙেছে মাটিবহন করা ট্রাক্টর

 

চুয়াডাঙ্গায় পৃথক দুর্ঘটনা : শিশুসহ নিহত ৪

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পৃথক দুর্ঘটনায় এক শিশুসহ নিহত হয়েছে ৪ জন। আহত হয়েছেন ৪ জন। গতকাল সন্ধ্যায় নানাবাড়ি হানুরবাড়াদি থেকে পিতার বাড়ি মহাম্মদজুমা কৌদপাড়ায় ফেরার পথে সরোজগঞ্জে করিমন উল্টে প্রাণ হারায় ৬ বছরের শিশু সোনিয়া খাতুন। সকালে ভিমরুল্লা থেকে মোটরসাইকেলযোগে কেদারগঞ্জ নতুনবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়ে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন দোকানী দেলোয়ার হোসেন (৩৪), জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া নিশ্চিন্তপুরে ইটভাটার মাটি বহনকরা ট্রাক্টরের হিচ ক্লিপ ভেঙে উল্টে মারা গেছে চালক সজল হোসেন। গত কয়েকদিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেছেন কার্পাসডাঙ্গা বাজারপাড়ার নূরজাহান (৩০)। তিনিও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ২২ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর সাথে লড়ছিলেন। গতকাল পৃথক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন মুন্সীগঞ্জ গড়গড়ির আসান মল্লিক (৭০)।

জীবননগর উথলীর মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ভিমরুল্লায় বসবাস করে আসছিলেন। তিনি ছোট থেকেই ভিমরুল্লার বোনের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। কেদারগঞ্জ নতুনবাজারে তার রয়েছে দোকান। গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি মোটরসাইকেলযোগে দোকানের উদ্দেশে রওনা হন। সাথে ছিলো ভাগ্নে ওয়াসিম ও মামাতো ভাই লিঙ্কন। ভিমরুল্লা-হাটকালুগঞ্জের মধ্যবর্তী তেলপাম্পের নিকট বিপরীতমুখি ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আছড়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন দেলোয়ার হোসেন। আহত হয় সাথে থাকা লিঙ্কন ও ওয়াসিম। ওয়াসিম ভিমরুল্লার জিনারুল ইসলামের ছেলে ও লিঙ্কন একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। আহত দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। লিঙ্কনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও ওয়াসিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে গতকালই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিহত দেলোয়ার হোসেনের লাশ তার ভিমরুল্লাস্থ বাসায় নেয়া হলে নিকটজনদের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। দাফনের প্রক্রিয়া করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের মহাম্মদজুমা কৌদপাড়ার হাফিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দুবাই প্রবাসী। তার স্ত্রী বিলকিস খাতুন শিশুকন্যা সোনিয়া খাতুনকে সাথে নিয়ে হানুরবাড়াদিতে আসেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় করিমনযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। করিমনটি সরোজগঞ্জ ছাদেমন নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী ডেউখেলানো রাস্তায় পৌঁছুলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়। করিমনটি উল্টে পড়ে। শিশু সোনিয়া করিমনের নিচে চাপা পড়ে। তাকেসহ করিমনের অন্য আহত যাত্রীদের নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সোনিয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তার লাশ কৌদপাড়ায় নেয়া হয়েছে। গতরাতেই দাফনের প্রক্রিয়া করা হয়। করিমন চালক উচু নিচু রাস্তায় অপর একটি করিমনের সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় বলে নিহত শিশুর নিকটজনেরা জানিয়েছেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত ২২ জানুয়ারি থেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন নূরজাহান খাতুন। তিনি দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা বাজারপাড়ার আতিয়ার রহমানের স্ত্রী। কীভাবে তিনি আহত হন তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও হাসপাতালের রেকর্ডে দুর্ঘটনা বলে লেখানো হয়েছে। গতকাল নূরজাহান মারা গেলে লাশ দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়। নূরজাহান চন্দ্রবাস গ্রামের নূরুল বিশ্বাসের মেয়ে।

অপরদিকে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ গড়গড়ির মৃত আছরা মল্লিকের ছেলে আসান মল্লিক (৭০) বাইসাইকেলযোগে মেয়ের বাড়ি গোয়ালবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মুন্সীগঞ্জ রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় আছড়ে পড়েন। মাথায় গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে গতকালই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসান মল্লিকের অবস্থা ছিলো সঙ্কটাপন্ন।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন মাটি ভর্তি ট্রাক্টর নিয়ে ইটভাটার পথে রওনা হয়ে হিচিং ভেঙে ইঞ্জিন উল্টে চালক নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর বাগমারা মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে সজল হোসেন (২৫) একই গ্রামের আলম হোসেনের ট্রাক্টরচালক। সে গতকাল সকালে প্রতিদিনের ন্যায় নিশ্চিন্তপুর বাগমারা মাঠ থেকে সঙ্গীয় লোকবলসহ ট্রাক্টর ভর্তি মাটি নিয়ে ইউনিয়নের বিদ্যাধরপুর খান ব্রিক্সে চুক্তি ভিত্তিক পৌঁছে দিচ্ছিলো। ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীগণ বলেছেন, সে বেলা দেড়টার দিকে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর নিয়ে খান ব্রিক্সের উদ্দেশে রওনা দিলে ট্রাক্টরটির পিছনের হিচিং ভেঙে ইঞ্জিন উল্টে মাথায় ও বুকে মারাত্বক আহত হয়। উপস্থিত জনতা তাকে মুর্মূষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে সন্তোষপুর মাঠে পৌঁছুলে চালক সজল হোসেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সদালাপী ও হাস্যোজ্জল সজল হোসেনের এ মর্মান্তিক অকাল মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না তোলায় গতকাল রাত ১০টায় স্থানীয় খাঁজা পারেশ সাহেবের রওজার ঈদগা ময়দানে জানাজা শেষে নিহতের লাশ রওজা গোরস্থানে দাফন করা হয়।