চুয়াডাঙ্গাবাসী দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ফিরে পেলো জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ হুইপ পদটি

চিফ হুইপ ..ম ফিরোজসহ ও পাঁচজন হুইপের নামসহ রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে প্রজ্ঞাপন জারি

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা জেলার সংসদীয় দুটি আসনে ১৫ জন রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে বিএনপির টিকেটে মাত্র ২৭ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আবু সাঈদ খান। ওই সময় তিনি জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ মনোনীত হন। আওয়ামী লীগ থেকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আবার চুয়াডাঙ্গাবাসী জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ হুইপ পদটি ফিরে পেলো।

দশম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নির্বাচিত হলেন নবম সংসদের হুইপ পটুয়াখালী-২ আসনের আ.স.ম ফিরোজ। চিফ হুইপ ও পাঁচজন হুইপের নামসহ রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে গতকাল শুক্রবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। জাতীয় সংসদের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক নাজমুল হুদা প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দশম জাতীয় সংসদের হুইপরা হলেন- শেরপুর-১ আসনের আতিউর রহমান আতিক, নওগাঁ-২ আসনের শহিদুজ্জামান সরকার, দিনাজপুর-৩ আসনের ইকবালুর রহিম, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবং মৌলভীবাজার-১ আসনের মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। এরা সকলেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে কেন্দ্রীয় জাসদ কার্যকরি সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তিনি সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে বিএনপি নেতা মিঞা মো. মনসুর আলী নির্বাচিত হন। ওই সময়ে তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে ব্যারিস্টার বাদল রশীদ (আওয়ামী লীগ) ও  চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে ডা. আসহাব-উল-হক (আওয়ামী লীগ ) নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মিয়া মো. মনসুর আলী (বিএনপি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে আবু সাঈদ খান (বিএনপি) নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মকবুল হোসেন (স্বতন্ত্র পরে জাতীয় পার্টি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে কেন্দ্রীয় জাসদ সভাপতি মির্জা সুলতান রাজা (সাত দলীয় জোট) নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মোহাম্মদ শাহজাহান (জাসদ) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাবিবুর রহমান হবি (জাতীয় পার্টি) নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মিয়া মো. মনসুর আলী (বিএনপি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাবিবুর রহমান (জামায়াত) নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে (১৫ ফেব্রুয়ারি) ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে শামসুজ্জামান দুদু (বিএনপি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাজি মো. মোজাম্মেল হক (বিএনপি) নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে (১২ জুন) সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে শামসুজ্জামান দুদু (বিএনপি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাজি মো. মোজাম্মেল হক (বিএনপি) নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস (বিএনপি) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাজি মো. মোজাম্মেল হক (বিএনপি) নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (আওয়ামী লীগ) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাজি মো. আলী আজগার টগর (আওয়ামী লীগ) নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (আওয়ামী লীগ) ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে হাজি মো. আলী আজগার টগর (আওয়ামী লীগ) পুনরায় নির্বাচিত হন।

            হুইপ মনোনত হওয়ার পর এমপি ছেলুনের প্রতিক্রিয়া: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে মনোনীত হওয়ায় আনন্দে ভাসছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টার পর থেকেই এমপির শহরের কবরীরোডস্থ বাসভবনে আ.লীগকর্মী, সমর্থকরা ভিড় করতে থাকেন। ফুলের মালা আর মিষ্টিমুখ করিয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে অভিনন্দন জানান।

সংসদের হুইপ হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও জানান, এখন চুয়াডাঙ্গার মানুষের জন্য দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো। তিনি আলমডাঙ্গায় একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণ, আলমডাঙ্গার কুমারী ভেটেরেনারি ইনিস্টিটিউটকে কলেজে রূপান্তরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ হাতে নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সোলায়য়মান হক জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে যা প্রয়োজন তা প্রথমেই করার চেষ্টা করবেন বলে জানান। আর এ সকল কাজে তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।