কুষ্টিয়ায় ঠিকাদার সেজে ৫৬ লাখ টাকা নিয়ে গেলেন যুবলীগ নেতা

 

স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ায় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বেসিক ব্যাংকের এনএস রোড শাখা থেকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৫৬ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন আনিচুর রহমান বিকাশ নামে এক যুবলীগ নেতা। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর অপরাধ স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি। বাকি টাকা কয়েক মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে রক্ষা পেয়েছেন। ঘটনার নেপথ্যে বেসিক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যুবলীগ নেতার মোটা অঙ্কের এ টাকা জালিয়াতির ঘটনায় কুষ্টিয়াজুড়ে তোলপাড় চলছে।

জানা যায়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। ৩০ মাস আগে কাজটির টেন্ডার হয়। গত বছরের জুলাই মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম সাঈদ নামের এক ব্যক্তি। ঢাকার বাসিন্দা এবং পূর্বপরিচিত হওয়ার সুবাদে এই কাজ দেখাশোনার জন্য সাইদুল ইসলাম মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করে কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সদস্য আনিচুর রহমান বিকাশকে দায়িত্ব দেন। এছাড়া বিকাশের স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিম্নমান সহকারী পদে চাকরি করার সুবাদে তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাধ যাতায়াত রয়েছে। জানা গেছে, ঠিকাদার সাঈদের প্রতিষ্ঠানের নামে কুষ্টিয়ায় কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এ সুযোগে বিকাশ অ্যাসকো ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী সেজে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বেসিক ব্যাংকের কুষ্টিয়া এনএস রোড শাখায় একটি চলতি একাউন্ট খোলেন। এর কিছুদিন পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি কাজের বিল বাবদ অ্যাসকো ইন্টারন্যাশনালের নামে ৫৬ লাখ টাকার একটি চেক ইস্যু করে। বিকাশ প্রকৌশল অধিদফতরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় চেকটি গ্রহণ করে বেসিক ব্যাংকে তার নামে খোলা একাউন্টে জমা দিয়ে ৫৬ লাখ টাকা তুলে নেন।

সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার ম্যানেজার মাসুদ হাসান এবং ওই ব্যাংকে কর্মরত বিকাশের আপন ভায়রার ছোট ভাইয়ের সাথে যোগসাজশে গত মঙ্গলবার এ টাকা তুলে নেন তিনি। জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে অ্যাসকো ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম পরদিন বেসিক ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ম্যানেজার মাসুদ হাসানকে অবগত করেন। এবং ওই দিনই তিনি ঢাকায় বেসিক ব্যাংকের প্রধান শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জালিয়াতির বিষয়টি উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চরম বিপাকে পড়ে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় বিকাশ জালিয়াতির কথা স্বীকার করে ওই দিনই প্রকৃত মালিক সাইদুল ইসলামের প্রতিনিধির কাছে ২০ লাখ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা কয়েক মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে স্ট্যাম্পে লিখিত দেন।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মকবুল হোসেন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসকো ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইদুল ইসলাম সাঈদের একটি অথোরাইজড লেটার পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিকাশের হাতে চেকটি প্রদান করে। বেসিক ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ম্যানেজার মাসুদ হাসান জালিয়াতির সঙ্গে তাদের যোগসাজশ থাকার কথা অস্বীকার করেন।