রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য আলোচনার পরিবেশ তৈরি করুন

 

স্টাফ রিপোর্টার: জনগণের ভোটে নয়, বর্তমান সরকার অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের গণসমাবেশে তিনি বলেছেন, গত ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মানেনি। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো গায়ের জোরে সব করা যায় না। তবে এ সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ অতি অল্পদিনের। শিগগিরই তাদের বিদায় নিতে হবে। বর্তমান সরকারকে অবৈধ, দুর্বল, দুর্নীতিবাজ ও নির্লজ্জ আখ্যায়িত করে সমালোচনা করলেও দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি বারবার সরকারের প্রতি সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আলোচনার আহ্বান জানান। বিরোধী জোট নেতা বলেন, ৫ জানুয়ারি মানুষ ভোট দিতে যায়নি। এটি কোনো নির্বাচন নয়। যদি মনে করে থাকেন গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকবেন তাহলে এদেশের তা হতে দেবে না। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা শান্তি চাই। অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য আলোচনার পরিবেশ তৈরি করুন। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সারাদেশে চালিয়ে যেতে চাই। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে শান্তি, স্বস্তি ও গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। আসুন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশের মানুষকে শান্তি দিই। দেশপ্রেমিক হয়ে থাকলে জুলুম না চালিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য শুরু ও শেষ করেন খালেদা জিয়া। বর্তমান সরকারকে অবৈধ দাবি করে দেশবাসীকে প্রতিবাদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, এ সরকার বৈধ নয়। এ সরকার আরেকবার ক্ষমতায় থাকলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। ছাত্র-যুবক, মা-বোনেরা আসুন। নতুন প্রজন্মকেও তাদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। আমি কিন্তু যুদ্ধ করতে বলছি না, প্রতিবাদের আহ্বান জানাচ্ছি। আগামী ২৯ জানুয়ারি সারা দেশে কালো পতাকা মিছিলে দেশবাসীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সর্বাত্মকভাবে অংশ নিন। আমরা আশা করবো সরকার সে কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। এদিকে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় পর বিএনপির সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ব্যতীত। তবে গণসমাবেশে একাত্মতা পোষণ করে প্রথমবারের মতো বিএনপির মঞ্চে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) সভাপতি কাজী জাফর আহমেদ।

কলঙ্কিত নির্বাচন, কলঙ্কিত সরকার: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কলঙ্কিত নির্বাচন। এ সরকার কলঙ্কিত সরকার। আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েছিলাম নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের। কিন্তু সরকার তার তোয়াক্কা না করায় প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। এ সময় খালেদা জিয়া বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ছবি দেখিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার শূন্যতার যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোনো ভোট হয়নি, যে নির্বাচনে ১৪৭টি আসনে ৫ ভাগের বেশি ভোট পড়েনি সেটা কিভাবে নির্বাচন হয়? সে নির্বাচনে নির্বাচিতরা কিভাবে জনগণের প্রতিনিধি হবেন? নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি মেরুদণ্ডহীন কমিশন। তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকার যা বলে তারা তাই করে। সরকারের বাইরে একটি কথা বলার সাহস তাদের নেই। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। কিন্তু সরকারের নির্দেশে তিন দিন সময় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সেটা ৪০ ভাগ দেখিয়েছে। তারা নির্লজ্জ কমিশন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী বর্জন করায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শোভাযাত্রা বের করে। জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপত্বি করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, অ্যাড. আ.স.ম আব্দুর রউফ, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মালিক মজু, আবু জাফর মন্টু, লিয়াকত আলী শাহ, নজরুল ইসলাম চেয়ারম্যান, রবিউল ইসলাম লিটন, মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, মোকাররম হোসেন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মোখলেছুর রহমান মখলেছ, আতিয়ার রহমান লিটন, তৌফিকুজ্জামান তৌফিক, আরিফুজ্জামান পিন্টু, মামুন রেজা সবুজ, সুশীল কুমার দাস, স্বাধীন অধিকারী, এমএ তালহা, রাজীব খান, সুজন মালিক, মহিদুল ইসলাম, মাহববুল হক খোকন, মিলন মিয়া, মোস্তাক হোসেন, ফারুক হোসেন, আব্দুস ছাত্তার, শাহনেওয়াজ কালু প্রমুখ।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা কোর্টমোড় থেকে একটি পতাকা মিছল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কোর্টমোড়ে এসে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপি সভাপতি অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল, আব্দুল হালিম হিরু, মাহামুদুল হক পল্টু, রউফুন নাহার রিনা, আবু আলা সামসুজ্জামান, অ্যাড. মসলেম উদ্দিন, অ্যাড. আসাদুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, মফিজুর রহমান, অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, শাজাহান খান মাও, আনোয়ার হোসেন একরামুল হক, রায়হান উদ্দিন তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রহসনের নির্বাচনকে না বলায় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি নেতা লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গা রূপছায়া সিনেমা হলের সামনে দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এবিএম হাসান হাসু, সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলী হোসেন, সহপ্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম মুকুট ও খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসুচি হিসেবে দর্শনায় শোভাযাত্রা ও গণসমাবেশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সভাপতিত্ব করেন- দর্শনা পৌর জামায়াতের আমির আ. কাদের। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমীন, জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক সাবু তরফদার, দর্শনা পৌর বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম খোকন, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট, রফিকুল আলম, আ. হান্নান, হাজি মুনসুর মণ্ডল, নজির আহম্মেদ প্রমুখ।

এদিকে জীবননগরে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিক। বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মো. রুহুল আমিন, জীবননগর উপজেলা আমির অধ্যাপক খলিলুর রহমান, সহসেক্রেটারি ইব্রাহিম, নায়েবে আমির, আন্দুলবড়িয়া ইউনিয়ন শাখার আমির ইউপি চেয়ারম্যান শাখওয়াত হোসেন প্রমুখ।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় ১৮ দলীয় ঐক্য জোটের শোভাযাত্রা ও সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। আলমডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলিফ উদ্দীন রোডস্থ আলতায়েবা মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর জব্বারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ টিপু, পৌর বিএনপির সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু, উপজেলা জামায়াতের সহকারী সম্পাদক দারুস সালাম, চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান, চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান রেজু, এমদাদুল হক ডাবু প্রমুখ।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় ব্রিজরোডের আড়ৎপট্টিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী শাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হবি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোকারম হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর দামুড়হুদা উপজেলা আমির নায়েব আলী, যুবদলের সেক্রেটারি সদ্যকারামুক্ত রফিকুল হাসান তনু, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন, দামুড়হুদা ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আ. রহমান মালিথা, সাবেক সেক্রেটারি ইকরামুল হক, জামায়াতে ইসলামী সদর ইউনিয়ন আমির শরিফুল আলম মিল্টন প্রমুখ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কেপি বসু সড়ক থেকে মিছিল বের করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু ও পৌর বিএনপির সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা বক্তব্য রাখেন।