স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেছেন, সহসাই ফের বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আপনারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। একই সাথে উপজেলা নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল সংরক্ষিত মহিলা আসনে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে গতকাল উপজেলা নির্বাচনে দলগতভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে পার্টির তহবিলে টাকা জমা দিয়ে ফরম কেনার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসেবে উপজেলায় দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ নেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে। সকাল ১১টায় বনানী কার্যালয়ে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হয়নি। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদেরও প্রধান ফটকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আর এমপি প্রার্থীদের সাথেও আলাদা করে কোনো কথা বলেননি পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। দিয়েছেন কিছু দিকনির্দেশনা। বলেছেন- এটাই শেষ নির্বাচন নয়। আবারও নির্বাচন হবে। যারা মহিলা এমপি হতে পারবেন না তাদেরকে উপজেলা নির্বাচনে চেষ্টা করার পরামর্শ দেন এরশাদ। সাক্ষাৎকার না নিয়ে তাদের বিদায় দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহিলা পার্টির নেত্রীরা। মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদের সাথে সমন্বয় করে দু একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে জাপার মহিলা নেত্রীরা জানান, আমাদের সকাল ১০টার মধ্যে বনানী কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছিলো। এরশাদ সাহেব ১১টার দিকে এলেও তিনি আমাদের সাক্ষাৎকার নেননি। আমাদের কনফারেন্স রুমে বসিয়ে জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় মহিলা পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি রিতু নূর বলেন, আমাদের এমপি করা হবে না এ জন্য আমাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়নি। আমরা আশঙ্কা করছি অন্য কোনভাবে বা অন্য কিছুর বিনিময়ে সুসময়ের পাখিদের এমপি করা হচ্ছে। এবার যদি তা করা হয় তাহলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। তিনি বলেন, পার্টি চেয়ারম্যানের জন্য ১ বছরের ছেলে নিয়ে জেল খেটেছি। যার জন্য জীবন-যৌবন শেষ করলাম তিনি এখন আর আমাদের চেনেন না।
জাতীয় মহিলা পার্টির রাজশাহী মহানগরীর সভাপতি বেগম সফুরা সরকার বলেন, আমরা মাঠে কাজ করি। টাকাও নেই। এখানে অনেকে এসেছেন তাদের আমরা জীবনেও দেখিনি। তারা মেকআপ পার্টি। মাঠে কাজ করলে এতো সাজার সময় থাকে না। মহিলা পার্টির যুগ্মসম্পাদক শিরীন চৌধুরী রীতা বলেন, জাপায় এখন আর প্রকৃত নেতা-নেত্রীর মূল্যায়ন নেই। তবে স্যার বলেছেন এটাই শেষ নির্বাচন নয়। জাতীয় মহিলা পার্টির গাজীপুর মহানগরীর সম্পাদক রোকসানা পারভীন বলেন, স্যার বলেছেন সহসাই আরেকটি নির্বাচন হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দুপুর ১২টার দিকে জাপা মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, একটি বড় দলে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেক কথাই আসে। এটাই স্বাভাবিক। প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে এমপি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অনেক কথাই আসবে। তবে তা সঠিক নয়। এবার বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেত্রীদের মূল্যায়ন করা হবে। এরশাদ ও রওশন এরশাদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জাপার মহাসচিব বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। জাপা মহাসচিবের বক্তব্য শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এরশাদ বনানীর কার্যালয় ত্যাগ করেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। গত শুক্রবার থেকে জাপার সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়। রোববার পর্যন্ত ৬টি আসনের বিপরীতে ৯৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে আগামী ২২ ও ২৩ জানুয়ারি আবেদনপত্র বিতরণ করা হবে। জাতীয় পার্টির ৬৬, কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য পার্টি তহবিলে তিন হাজার টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য দু হাজার টাকা করে পার্টি তহবিলে জমা দিতে হবে। ২৩ জানুয়ারি বিকেলেই প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জাপার অফিস সূত্র জানিয়েছে।