স্টাফ রিপোর্টার: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যা করা প্রয়োজন তাই করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা এসব কাজ করে তাদের পেছনে যতো বড় মুরব্বিই থাকুক রক্ষা করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী জোটকে গণতান্ত্রিক পথে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনীতি করতে হলে তাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ছাড়তে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হয়। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর গতকালই প্রথম বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আবারও তার দলকে সরকার গঠন করার সুযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে ভোটার ও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। যা যা প্রয়োজন আমরা তা করবো, করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াতের এসব জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে চলবে না। দেশের মানুষ মেনে নেবে না। নির্বাচনেও তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছে। সরকার গঠনের পরে দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ায় দেশবাসীকে অভিনন্দন। দেশের মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আমাদের এখন অনেক দায়িত্ব। জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যদিও বিএনপি নেত্রীর জনগণের শান্তি দেখলে ভাল লাগে না।
সংখ্যালঘুদের হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত অভিযোগ করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা দেখে ২০০১ সালের কথা মনে পড়ে যায়। তারা এবার নির্বাচনে আসেনি তাতেই এ অবস্থা। নির্বাচনে এলে, আর ক্ষমতায় যেতে পারলে অবস্থা কী হতো? সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় ক্ষতিপূরণে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হামলার ৫ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। ঘরের ডিজাইনও করে দিয়েছি। টিনের চালা আর পাঁচ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দিয়ে তাদের বাড়ি করে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াত হত্যার উৎসব করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি গরুভর্তি ট্রাক, সবজির গাড়িতেও তারা পেট্রল দিয়ে আগুন দিয়েছে। তারা তাদের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এটা কোন আন্দোলন না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
হয়ে যাওয়া নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারই প্রথম একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নিয়েছে। এর আগে প্রত্যেকটা নির্বাচনের মাঝখানে একটা সমস্যা হয়। এবার এটা হয়নি। তিনি বলেন, যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার উৎসবে মেতেছিলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে। কিন্তু মানুষ তাদের সব চেষ্টা প্রতিহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখাই হবে আমাদের কাজ। তিনি বলেন, এখন থেকে রাজনীতি করতে হলে শান্তিপূর্ণভাবেই করতে হবে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শুরু হওয়া এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কার্যনির্বাহী সংসদের প্রায় সকল সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠক। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ৫৯ জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়।