স্কুলছাত্রী ধর্ষিত : ধামাচাপা দেয়ার জন্য ৩ লাখ টাকা দাবি

আন্দুলবাড়িয়ায় আলোচিত ঘটনা আপসের নামে প্রভাবশালীদের সালিস

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল আন্দুলবাড়িয়া থেকে ফিরে: জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি সালিস বৈঠকের মাধ্যমে একতরফাভাবে আপসরফার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলা আপস মীমাংসার মধ্যস্থতাকারীরা ধর্ষিতাকে নগদ ২ লাখ টাকা এবং পুলিশ, সাংবাদিক ও মানবধিকার সংস্থাকে ম্যানেজ করতে আরো ১ লাখ টাকা দাবি করেন ধর্ষকপরিবারের কাছে। আপস-মীমাংসার এ বিষয়টি পরের দিন জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

এলাকাবাসীর অনেকেই মন্তব্য করে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা নিজেদের পকেট ভারী করতে ধর্ষিতার পরিবারকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি ধর্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করতে দিচ্ছেন না। তারা সালিসের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করারও অপচেষ্টা করছে। এদিকে আলোচিত ধর্ষণ ঘটনার বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মশিউর রহমান গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের সময় তিনি ধর্ষিত স্কুলছাত্রী ও তার পিতার জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করেছেন। লিখিত জবানবন্দীতে অভিযুক্ত ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিবরণ তুলে ধরে লম্পট ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ধর্ষিতার পরিবারের এক সদস্য জানান, মধ্যস্থতাকারীরা আপস-মীমাংসার কথা বলে মামলা করতে দিচ্ছেন না।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের প্রভাবশালী আহাদ আলীর ছেলে রাজীব হাসান (২৫) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গত রোববার রাতে ধর্ষণ করে।

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের মণ্ডলপাড়ার মৃত রজব আলী দফাদারের ছেলে হাফিজুর রহমানের বাড়িতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার, মৃত নফর আলী মণ্ডলের ছেলে আব্দুল লতিফ, ইউপি সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান, ছাদ আহম্মদ, দলিল লেখক আহাদ আলী, নবী মণ্ডলের ছেলে জালাল উদ্দিন, মৃত রবেজ মণ্ডলের ছেলে সদর আলী ও ধর্ষক রাজিব হোসেনের পিতা আহাদ আলী ওরফে খোকন উপযুক্ত বিচার করার আশ্বাস দিয়ে ধর্ষিতার পিতাকে বৈঠকে ডেকে নেন। অভিযুক্ত ধর্ষককে বৈঠকে অনুপস্থিত রেখে রাত ৩টা পর্যন্ত চলা গোপনীয় বৈঠক শেষে তারা ধর্ষণ করার অপরাধে ধর্ষকের পিতাকে নগদ ২ লাখ টাকা জরিমানা হিসেবে এবং একই সাথে পুলিশ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করার জন্য আরো ১ লাখ টাকা মধ্যস্থতাকারীদের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাব রেখে বৈঠকটি শেষ করেন বলে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া সালিস বৈঠককারীদের মধ্যে একজন ধর্ষকের পিতার জমি কমমূল্যে  রেজিস্ট্রি করে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সমুদয় টাকা মধ্যস্থতাকারীদের হাতে তুলে দেবেন বলে গ্রামসূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, আহাদ আলীর ছেলে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাজীব হাসান নানাভাবেই আলোচিত। সে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আগের সেসব ঘটনা গোপনে মিটিয়ে ফেলা হয়েছিলো। তবে এলাকাবাসী এবার এ ঘটনায় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য কামনা করেছে।