চুয়াডাঙ্গার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবর আলী ছেলে নয়নের সহায়তায় ভিক্ষাবৃত্তি নয় ভ্যানযোগে বিস্কুট ফেরি করে চালান সংসার

সাইদুর রহমান: ভিক্ষাবৃত্তি সম্মানজনক নয়, অপমানের। এরপরও অনেকেই আছেন যারা শারীরিকভাবে স্বাভাবিক কাজে অক্ষম এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তান, এদের অধিকাংশকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে দেখা যায়। অথচ দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেননি চুয়াডাঙ্গা দৌলতদিয়াড়ের বাবর আলী। তিনি তার ছেলে নয়নের সহায়তায় ভিক্ষাবৃত্তি না করে ভ্যান চালিয়ে বিস্কুট ফেরি করে জীবন সংগ্রামে স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার হুচুকপাড়া গ্রামের মৃত. সমজের আলীর ছেলে বাবর আলী একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ায় বসবাস করেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবর আলী তার ছেলে দৌলতদিয়াড় শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নয়নের সহায়তায় মৌসুমী বিস্কুট ফ্যাক্টরির বিস্কুট ভ্যানে করে জেলার বিভিন্ন দোকানে বিস্কুট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবর আলী বলেন পেটের তাগিদে আর ফ্যাক্টরি আমার জিম্মায় বিস্কুট না দেয়ার কারণে সন্তানের বাস্তব স্বপ্নটাকে কবর দিয়ে তার দৃষ্টিশক্তির বলে বিস্কুট বোঝাই ভ্যানগাড়িটির সিটে বসে হ্যান্ডেল ধরে রাখে আর আমি পেছন পেছন ঠেলে দোকানে দোকানে বিস্কুট দিই। হুচুকপাড়া গ্রামের মাতবর ছানোয়ার হোসেন বলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবর আলী ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী। নিজে আয় করে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় ভারতের কোলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চোখের ডাক্তার দেখিয়েছে। বিভিন্ন দোকানির সাথে কথা হলে বলেন, বাবর আলী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও অনেকের মতো ভিক্ষা করে না। তার কথার অনেক মূল্য। সময়মতো আমাদের দোকানে বিস্কুট পৌঁছে দেয় এবং অধিক পরিশ্রম করে। তাকে দেখে আমাদের শেখা উচিত। ছেলে নয়ন জানায় হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরেও পিতার একমাত্র ছেলে হওয়ায় স্বপ্ন ছিলো ভালোভাবে লেখাপড়া করবো কিন্তু বাবার দৃষ্টিহীনতা আর পাঁচজনের সংসার চালাতে পিতার সহযোগী হিসেবে প্রথম ক্লাস শেষ করেই ছুটি নিয়ে ভ্যান নিয়ে পিতার দৃষ্টি হয়ে চলি বিস্কুট নিয়ে বিভিন্ন দোকানে দোকানে। বাবর আলী আরো বলেন ডাক্তার জানিয়েছেন, আমার একটি চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট আর একটি চোখের ৯৫ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। যা আর কোনো দিনই ভালো হবে না বরং যেটুকু বাকি সে টুকুও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানান।