আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)। রহমাতুল্লিল আলামিন, সায়্যেদুল মুরসালিন, তাজেদারে মদিনা, কুল-মাখলুকাতের সেরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (স.) এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। চান্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকে মা আমেনার কোল আলোকিত করে আসেন তিনি। তখন ছিলো আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশা। তা ভেদ করে সত্য, ন্যায় ও একত্ববাদের আলোকবর্তিকা হয়ে ধরাধামে আগমন হয় খাতেমুন্নাবিয়্যান (স.)।
ঈদ অর্থ-আনন্দ, আর ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) অর্থ-নবী (স.) এর জন্ম বা জন্মোত্সব। নবী করীমের (সা.) ওফাত দিবসও এই ১২ রবিউল আউয়াল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, অমা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আল আমিন অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। ফরাসি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ইতিহাসবিদ প্রফেসর লামার্টিন তার তুরস্কের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেন, উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, উপায় উপকরণের স্বল্পতা এবং বিস্ময়কর সফলতা- এই তিনটি বিষয় যদি মানব প্রতিভার মানদণ্ড হয়, তাহলে ইতিহাসের অন্য কোনো মহামানবকে মুহাম্মদের সাথে তুলনা করবে এমন কে আছে? বাস্তবিক পক্ষেই দার্শনিক বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, আদর্শ বিজেতা, মানবিক রীতি-নীতির প্রবর্তনকারী, ধর্মীয় সাম্রাজ্য ও জাগতিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি মুহাম্মদ (স.)। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, সন্তান বত্সল এবং বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সর্বাধিক সম্মানিত, মানব সমাজে তিনি সবচেয়ে উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, প্রেমময় স্বামী, বন্ধুত্বে অবিচল এবং অন্যের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতব্যয়ী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনি, কুত্সাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের তিনি প্রতিপক্ষ। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারে, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং এক মহান ধর্ম প্রচারক।
মুহাম্মদ (স.) কেবল মুসলমানদের নবী নন। তিনি কেবল আরবি ভাষাভাষিদের নবী নন। শুধু আরবদের নবী নন বরং পৃথিবীর সবার ও সকল ভাষাভাষির জন্য সর্বকালের জন্য তিনি নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মানবিক প্রবৃত্তির সবকিছু মুহাম্মদ (স.) এর মধ্যে ছিলো। যখন তাঁর বয়স ৪০ হলো তখন তিনি ওহির মাধ্যমে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। হিজরত পূর্ববর্তী মক্কার ১৩ বছর নানাভাবে অত্যাচারে নির্যাতনে জর্জরিত করা হয়েছিলো। তিনি এরপর হিজরত করে মদিনায় চলে যান। সেখানে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের কল্যাণে তিনি সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। যাকে মদিনার সনদ বলা হয়। মাদানি জীবনের দশ বছরে রসূল (স.) এর ওপর আল্লাহ বিরোধীরা বারবার যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলেন। প্রত্যেকটি যুদ্ধে তিনি বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা তুলেছিলেন।
রসূল (স.) যাআল হাক্কু অযাহাকাল বাতিলু ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা বলতে বলতে আল্লাহর ঘর কাবায় প্রবেশ করেছিলেন, তারপর বিদায় হজের ভাষণে ১ লাখ ১৭ হাজার সাহাবীর সামনে বলেছিলেন, আমি কী আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছি? সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হ্যা সূচক জবাব দিয়েছিলেন। এরপর কোরআনের সর্বশেষ আয়াত অবতীর্ণ হয়- ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম-দ্বী-নাকুম…’ অর্থাৎ আজকের দিনে আমি ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। মিলাদুন্নবীর (স.) পবিত্র দিনে এই মহামানবের প্রতি আমাদের শত-সহস্র সালাম ও দরূদ। আজকের দিনে প্রত্যাশা- প্রতিষ্ঠা হোক বিশ্ব মানবের শান্তি ও কল্যাণ।