আজ থেকে সারাদেশে আবার ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: নির্বাচনকে সম্পূর্ণ প্রহসন আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ফের টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এর আগে নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে আজ সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে ১৮ দল। ফলে মূলত টানা ৯৬ ঘণ্টার হরতাল ডাকলো বিরোধী জোট। সাথে আগে ডাকা দেশব্যাপি অনির্দিষ্টকালের সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধের কর্মসূচিও চলতে থাকবে বলে জোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

ভোট শেষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ১৮ দলের পক্ষে নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক নতুন করে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে সংলাপে বসতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রহসনের নির্বাচন বন্ধে চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহন করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাফল্যমণ্ডিত করায় দেশবাসী ও জোটের নেতাকর্মীকে অভিনন্দন জানান তিনি।

এদিকে এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের একগুঁয়েমি, একরোখা নীতি এবং এক ব্যক্তির মনোস্কামনা পূরণের প্রহসনমূলক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশব্যাপি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মাধ্যমে সরকারের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। একটি অর্থহীন, হাস্যকর ও সবার কাছে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বর্তমান সরকার দেশবাসীর নিকট ধিকৃত হয়েছে। ভোটদান থেকে বিরত থাকায় তিনি দেশবাসী ও ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যদিকে গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান দাবি করেছেন নির্বাচনে ৪ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি।

ওসমান ফারুকের সংবাদ সম্মেলন: সংবাদ সম্মেলনে ড. ওসমান ফারুক বলেন, জনগণ ভোট না দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বাকশালী আচরণের দাতভাঙা জবাব দিয়েছে। একটি অর্থহীন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার কেবল ঘৃণাই কুড়িয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থীবিহীন একদলীয় ও আসন ভাগাভাগির নির্বাচনী প্রহসনের নাটক মঞ্চয়ান কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আজকের তারিখটি জাতির কাছে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। গণআন্দোলনকে পরাভূত করতে যৌথবাহিনী দিয়ে বিরোধীদল দমনের ঘটনায় জাতির কাছে আওয়ামী সরকারের ঘৃণ্য রূপ প্রকাশ পেয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা প্রকাশ পেয়েছে। জনগণ ভোট বর্জনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলে দিতে চাই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। নির্বাচনে গড়ে ৩ থেকে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। বহু লোক হত্যা করা হয়েছে, বহু কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। এ নির্বাচনের ফলাফল আমরা গ্রহণ করি না। এ সরকার অবৈধ। এ সরকারের ক্ষমতায় থেকে জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।

ড. ওসমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- শৈত্যপ্রবাহের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিলো। বাস্তবে দেশের মানুষ ভোট বর্জন করে ঘৃণার শৈত্যপ্রবাহে সরকারকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন বাতিল ও নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে। আরাধ্য লক্ষ্য অর্জিত হলে আন্দোলন বন্ধ হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পাতানো নির্বাচন বর্জন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ২১ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। অসংখ্য আহত হয়েছেন। যতো সময় যাবে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। তিনি অবিলম্বে এ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন।

মির্জা ফখরুলের বিবৃতি: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বিবৃতিতে বলেন, একদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গৃহবন্দি করে রাখাসহ বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ১৮ দলীয় জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে জেলে অভ্যন্তরীণ রাখা হয়েছে। অপরদিকে ভোটারবিহীন একদলীয় ভাগাভাগির নির্বাচনী প্রহসনের নাটক মঞ্চায়ন জাতির কাছে এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে দাবিয়ে দিতে সরকার একের পর এক দেশব্যাপি যৌথবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বিরাধী দলীয় নেত্রীকে গৃহবন্দী এবং দেশব্যাপি যে নিষ্ঠুর ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তাতে জাতি আওয়ামী সরকারের ঘৃণ্য তাণ্ডবের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়ভাবে ব্যবহার এবং প্রশাসন যন্ত্রকে নিজেদের ইচ্ছামত সাজিয়ে আজকের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার যে বাসনা করেছিলো তা আজকের একদলীয় নির্বাচনকে স্বতস্ফূর্তভাবে না বলার মাধ্যমে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোটারের উপস্থিতিবিহীন ভোটকেন্দ গুলোর প্রকৃত তথ্যচিত্র ইতোমধ্যেই দেশবাসীসহ গোটা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।

ফখরুল আরও বলেন, এ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত সরকার সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনে নিহত-আহদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণভাবে চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

ড. মঈন খানের সংবাদ সম্মেলন: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান তার গুলশানের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে জনগণ প্রমাণ করেছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অসম্ভব। একই সঙ্গে বিএনপি এতদিন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করেছে, তা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বলেছিল এটা হবে অপর্যবেক্ষণযোগ্য নির্বাচন।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার সুবলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে ২টি ও গ্রামের ভিতরে ১টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা  ভোটারদের মধ্যে আতংক সৃষ্টির লক্ষে এঘটনা ঘটায় বলে অনেকে ধারনা। এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার  সুবলপুর গ্রামের মৃত্যু আজিজুল হক পালের ছেলে মুকুল পালের বাড়ীর সামনে দুর্বৃত্তরা একটি শক্তিশালী ককলেটের বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ২০ মিনিট পর দুর্বৃত্তরা সুবলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে পরপর আরও ২টি ককলেটের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। শেষমেষ কোনো ধরনের অঘটন না ঘটলেও ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটাই কমে যায়।

দর্শনা অফিস/ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার সুবুলপুর গ্রামে পৃথক তিনটি স্থানে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে নাসকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে বোমাবাজরা এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে গ্রামবাসী। গতকাল ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যেই নির্বাচনের আগের রাত ১২টার দিকে সুবুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাত্তার পালের ছেলে মুকুল পাল ও সুবুলপুর বীজ ঘাটে একটি করে মোট তিনটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কে বা কারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা জানা না গেলেও গ্রামবাসী মন্তব্য করে বলেছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের ২য় দিনে গতকাল রোববার মেহেরপুরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিন জেলা থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছাড়েনি এবং আন্তঃনগর কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে দিনের বেলা বেশ কিছু ছোট ছোট যান চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ ছিলো। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কাউকে পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ধলা গ্রাম থেকে ২টি ককটেলসহ ইমরান হেসেন (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার সকাল নয়টার দিকে গাংনী থানার এসআই একরামুল হক সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ইমরানকে গ্রামে নিজের মুদিদোকান থেকে গ্রেফতার করে। সে স্থানীয় বিএনপি কর্মী এবং ওই গ্রামের মৃত কলিম উদ্দীনের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের নির্বাচনী এলাকার কাথুলী ইউনিয়নের স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্বপালনকারী গাংনী থানা পুলিশের এসআই একরামুল হক জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের লক্ষ্যে ইমরান তার মুদিদোকানের পেছনে ককটেল দুটি রাখে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুটি তাজা ককটেলসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার নামে গাংনী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।