দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা ও চিৎলায় গ্রামে হনুমানের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ৩৫ ৯ ঘণ্টার উত্তেজনা : গুলিতে নিথর ক্ষ্যাপা হনু

স্টাফ রিপোর্টার: লড়াই নাকি যুদ্ধ? টানা ৯ ঘণ্টা ধরে একটি হনুমানের লাগাতার আক্রমণে দামুড়হুদার চিৎলা ও গোবিন্দাহুদা গ্রামের নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জন ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ জন। একজনকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হনুমানের একতরফা আক্রমনের পর উত্তেজনার প্রসমন ঘটে বিকেল ৩টায়।

অবশেষে তেঁতুলগাছের মগডালে আশ্রয় নেয়া হনুমানকে গুলি করে তার ক্ষ্যাপাটে আচরণকে নিথর করা হয়। দুটি গ্রামে নামে উল্লাস। যে হনুমানকে এলাকাবাসী প্রায় আড়াই বছর ধরে ফল-ফলারি রুটি-পাউরুটি দিয়ে আদর করেছে, আগলে রেখেছে, সেই হনুমান হঠাত করে বলদে গেলো কেন? এলাকাবাসী এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পেয়েছেন কুকুর ছানা হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। হনুমানটা আগে কুকুর ছানা মারেনি। এবারের শীতে হনুমানটি গোবিন্দহুদা ও চিৎলা গ্রামের যেখানেই কুকুর ছানা পেয়েছে সেখানেই সে থাপড়ে, আছড়ে হত্যা করেছে। সহ্য করেনি এলাকার কুকুর দল। কয়েকদিন আগে কয়েকটি কুকুরছানা মারতে গেলে কয়েকটি কুকুর ঘিরে ধরে পাল্টা আক্রমণ করে। ক্ষতবিক্ষত হয় হনুমান। অনেকেরই ধারণা, কুকুরের কামড়ে হনুমানটি ক্ষেপেই মূলত একের পর এক মানুষকে কামড়ে হাঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ক্ষত-বিক্ষতদের হাসপাতালের চিকিৎসক জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন,  প্রায় আড়াই বছর আগে একটি হনুমান চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা ও চিৎলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের গাছে আশ্রয় নেয়। সাধারণ মানুষ ওই হনুমানটিকে আদর করে কলা, পাউরুটিসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াতো। দিন পনের আগে চার দিনের ব্যবধানে ওই হনুমানটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক কুকুরের বাচ্চা আছড়ে-কামড়ে মেরে ফেলে। কুকুর ছানা কামড়ে মেরে ফেলার সময় কয়েকটি মা কুকুরের সাথে ওই হনুমানের কামড়া-কামড়ি হয়। গ্রামবাসীর ধারণা কুকুরের সাথে কামড়া কামড়ির ফলে কুকুরের বিষে হনুমানটি ক্ষেপে যায়।

গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে হনুমানটি মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করে। গোবিন্দহুদার ঠাণ্ডুর  রহমানের ছেলে মওলা খেজুর গাছ থেকে রসের ভাড় গুলতে মাঠের দিকে রওনা হন। মাঠের পথের একটি গাছ থেকে হনুমানটি নেমে আকস্মীক তাকে হাছড়ে দেয়। রক্তাক্ত জখম হন। এর কিছুক্ষণ পরই হনুমানটি চিৎলা গ্রামের রওশনের স্ত্রী জেসমিন (৩৭) ও ছানোয়ারের স্ত্রী আয়শাকে ( ৩০) কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে। এরা ঘরের ছাদে বসে বড়ি দেয়ার কাজ করছিলো। হনুমানটি খাবারের দিকে না গিয়ে পেছন দিক থেকে কামড়ে ও আছড়ে ক্ষতবিক্ষত করে সটকে পড়ে। পর্যায়ক্রমে শিশুসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ ও ১০/১২টি গৃহপালিত গাভীকে কামড়ে জখম করে। আহতদের মধ্যে মারাত্মক জখম ১৫ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্যদের দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগিরা বিষয়টি দুপুরে পুলিশ প্রশাসনকে জানালে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবিব গুলি করতে অপরাগতা প্রকাশ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বরনাপন্ন হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুসহ হাজারো গ্রামবাসী বিকেল ৩টার দিকে একত্রিত হয়ে লাঠি, ফালা, বল্লভ, ঝুপি নিয়ে হনুমানটির প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হুনুমানের তাণ্ডব চলতে থাকে বিকেল পর্যন্ত। বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী হনুমানটিকে হেঁসো দিয়ে কয়েকটি কোপও মারে। তাতেও মরেনি হনুমানটি। এক পর্যায়ে হনুমানটি একটি বড় তেঁতুলগাছের মগডালে উঠে আশ্রয় নেয়। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনেরে সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের নির্দেশে উপজেলার দর্শনার স্বপন তার লাইসেন্সধারী বন্দুক দিয়ে পরপর তিনটি গুলি চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে হনুমানটি নিচে পড়ে যায়। এ সময় ক্ষিপ্ত জনতা হনুমানটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।

আহতরা হলো চিৎলা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আজগার (৪০), একই গ্রামের মন্টুর ছেলে সুজন (২৫),  রশিদের স্ত্রী আছিয়া, মাহামুদের ছেলে আবুল, শওকতের ৭ বছর বয়সী শিশু সন্তান রহিম, গোলাম শেখের ছেলে আসমান (৪০), আব্দুর রহিমের স্ত্রী বুলবুলি, ছানোয়ারের স্ত্রী আয়েশা, ভোলাই শেখের ছেলে আতিয়ার, হারিছন বিবি, লুৎফর, নাসির, আতিয়ারের স্ত্রী, রহিমের স্ত্রী, আব্দুস সাত্তার প্রমুখ। গোবিন্দহুদা গ্রামের মহাসিনের স্ত্রী, রশিদের স্ত্রী, মওলা, মওলার মা, আব্দুল, আরশেদের স্ত্রী, ভোলার স্ত্রী, তাহাজ, সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী, মতিয়ার রহমানের স্ত্রী, জানুর স্ত্রী, হামিদের মা, হাসিবুল, রহেদ (১১), শওকত, আব্দুল, আছিয়া ও আরেশদ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারা হলেন, চিৎলা গ্রামের নাসিমা (২০), আব্দুর রশিদ (৬০), শুভ (৯), নূরজাহান (১০), সাজেদা খাতুন (৪৫), সিরাজুল ইসলাম (৭০), জেসমিন আখতার (২৫) আয়েশা খাতুন (২৫) আশরাফুল ইসলাম (৬৫), সুমন (২২), রোজা খাতুন (৪০) ও গোবিন্দহুদার খাদিজা (৫৫)। খাদিজাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হলেও অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে তাদের অনেকেরই জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।