স্টাফ রিপোর্টার: পাকিস্তানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়েছে তালেবানরা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এ হামলা চালাতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে আসার পর ইসলামাবাদে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ করাচিতে কূটনৈতিক মিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রও পাকিস্তান সরকারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে যখন বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া চলছে তখনই এমন জঙ্গি হামলার হুমকির খবর প্রকাশিত হলো। পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। এ রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডে তালেবানরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা চালাতে পারে। তাই এ পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ইসলামাবাদের আবাসিক এলাকার এফ-৬/৩ নম্বর হোল্ডিঙে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবস্থিত। এটি ইসলামাবাদের সবচেয়ে অভিজাত এলাকাগুলোর একটি। নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সাথে বড় বড় দূতাবাসে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বড়দিনের প্রেক্ষাপটে স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ কমান্ডো মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল ইসলামাবাদে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কূটনীতিক বলেন, তালেবানদের হুমকির বিষয়টি আমরাও গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। সাথে সাথে বিষয়টি পাকিস্তান সরকারকে জানানো হয়। তারা ইসলামাবাদ ও করাচি মিশনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। আপাতত কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশ সরকারকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বরের পর হাইকমিশনের সামনে কোনো বিক্ষোভ বা সমাবেশ হয়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও গতকাল ইসলামাবাদ থেকে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন ও এর আশপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বিকেলে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। তিনি টেলিফোনে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও করাচিতে ডেপুটি হাইকমিশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। ইসলামাবাদ থেকে ঢাকাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরদিন ফাঁসির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনার ৪২ বছর পর কাদের মোল্লার ফাঁসি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। অখণ্ড পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে; এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুতে সকল পাকিস্তানি মর্মাহত, শোকাহত। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে পুরানো ক্ষত আবারো খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে (পার্লামেন্টে) কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার নিন্দা করে একটি প্রস্তাবও পাস হয়। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান কাদের মোল্লার ফাঁসির সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা করে, তারা তাকে নির্দোষ বলে দাবি করে।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ঢাকাস্থ পাকিস্তানি হাইকমিশনার আফরাসিয়াব মেহেদি হাশমি কোরেশিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। তাকে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নিন্দা প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অসন্তোষের কথা জানানো হয়। এর আগে ওই দিনই সরকারের এক মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের দাবি ওঠে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করা হচ্ছে।