চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বহুল আলোচিত বিলের ধারে আবারো রক্তের হলি : নেপথ্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত শুরু
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে স্টাফ রিপোর্টার: নতিপোতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিজান খুন মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামি মিনারুলসহ দুজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে খুন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে বিলদলকার পূর্বপ্রান্তের ঘোগরাখালের নিকট থেকে দুজনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলো- চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়নের পোতারপাড়া গ্রামের শামসুল মালিতার ছেলে মিনারুল মালিতা (৩৫) ও আলমডাঙ্গা উপজেলার শিবপুরের ফাকের ওরফে শাকের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব। মিনারুলের লাশ গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার নিজ গ্রাম পোতারপাড়ায় নিয়ে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
হাবিবের পরিচয় উন্মোচন না হওয়ায় লাশ গতকাল হাসপাতালমর্গে রাখা হয়। আজ ময়নাতদন্ত শেষে তার নিকটজনদের কেউ লাশ গ্রহণ করতে চাইলে তার নিকট হস্তান্তর করা হবে। মিনারুল নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোগলডাঙ্গা গ্রামের মিজানকে তার বাড়িতে স্ত্রী সন্তানের সামনে খুন মামলার জামিন প্রাপ্ত আসামি। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের পর সে প্রায় দেড় বছর জেলহাজতে ছিলো। আনুমানিক ৬ মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়। অবশেষে মিনারুল ও হাবিব নৃশংসভাবে খুন হলো। গতপরশু রাতে এদেরকে খুন করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশসহ স্থানীয়রা। তারা বলেছে, বিল দলকাপাড়ে রক্তের হলি নতুন নয়। তবে বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবারও ঘটলো জোড়াখুনের ঘটনা। এ খুনের নেপথ্যে অস্ত্রধারীধের আভ্যন্তরীন কোন্দল নাকি মিজান খুনেরই জের? বিল নিয়ে বিরোধের বলি নয়তো? এসব প্রশ্নের জবাব মিলছে না। পুলিশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রাশেদুল হাসান, এসপি (প্রবি) আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার খুনের বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথাও বলেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়নের পোতারপাড়ার মিনারুল ইসলাম বিদেশে পাড়ি দিয়ে প্রতারিত হওয়ার পর থেকেই অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। তার প্রথম স্ত্রী মেহেরপুর দারিয়ারপুরের রেবেকার সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। এ সংসারে রয়েছে তার এক মেয়ে খুশিতা। সে বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মিনারুল দ্বিতীয় বিয়ে করে নতিপোতার দুলালনগর গ্রামের কাশেমের মেয়ে তাছমিনের সাথে। তাছমিন বর্তমানে অন্তঃস্বত্ত্বা। মিনারুলের ভাই জালাল উদ্দীন বলেছেন, গতপরশু রোববার বিকেলে বোনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মিনারুল বাড়ি থেকে বের হয়। বোনের বাড়ি যায়নি। রাতে আর বাড়ি ফেরেনি।
অপরদিকে আলমডাঙ্গা আসমানখালী শিবপুরের ফাকের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মোচাইনগর গ্রামের বসবাস করে আসছিলো। সে মোচাইনগরেরই ভোটার। উড়নচণ্ডি প্রকৃতির ছিলো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কখন কার সাথে বের হওয়ার পর দলকা লক্ষ্মীপুরের বিলপাড়ে ঘোগার খালের নিকট কীভাবে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। কেনই বা হাবিবের মুখে অসংখ্য কোপ মেরে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে তাও জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইলফোনে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি নিজেকে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এমএল নিউ দাদা ভাই মারুফ বলে পরিচয় দিয়ে বলে, ওরা ছিলো বেইমান। এ কারণে মারা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, সোমবার সকালে দলকা লক্ষ্মীপুর বিলপাড়ের ঘোগার খালের নিকট রক্তাক্ত দুজনের লাশ দেখে স্থানীয়রা খবর দেয়। খবর পেয়ে প্রথমে লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এবি তাবিবুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর আজিজুর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করেন। লাশ উদ্ধারের সময়ই ধারালো অস্ত্রের খণ্ডাংশসহ পাদুকা উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়। প্রথমে দুজনেরই পরিচয় অজ্ঞাত থাকে। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে পরিচয় মিলতে শুরু করে। মিনারুলের ভাই জালাল লাশ দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন। তিনিই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দামুড়হুদা থানার এসআই ইব্রাহিম। তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে গতরাত শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
দামুড়হুদা নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানকে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাতে তার বাড়িতে স্ত্রী ও কন্যার সামনে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এ খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এদেরই একজন পোতারপাড়ার মিনারুল মালিতা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বলে পুলিশ জানালেও মিনারুলের ভাই অবশ্য বলেছে, সে চাষ কাজ করতো। অপরদিকে বিলপাড়ের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধের জের ধরে আধিপত্য বিস্তারের জন্য জোড়া খুন করা হয়েছে কি-না তাও ক্ষতিয়ে দেখছে পুলিশ।