চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি পারলক্ষ্মীপুর বাজার থেকে ঘাতক ধরে গণপিটুনির পর পুলিশে হস্তান্তর

নেশার টাকা না পেয়ে শিশু সন্তানকে খুশে আছড়ে হত্যা করেছে পাষাণ্ড পিতা

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে স্টাফ রিপোর্টার: হানেফ মেরেছে অনেককে। তাকে জবাই করেছে প্রতিপক্ষদলের সদস্যরা। আর হানেফের ছেলে কালু ওফে বিপ্লব গাঁজা কেনার টাকা না পেয়ে চৌকির সাথে মাথা খুশে ও আছাড় মেরে হত্যা করেছে সাড়ে ৪ বছরের ফুটফুটে শিশু সন্তান নয়নকে। গতপরশু রাতে সে তার নিজ ঘরে সন্তান হত্যা করে। গতকাল রোববার সকালে আলমডাঙ্গার পল্লি পারলক্ষ্মীপুর বাজারে ঘোরার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে কালু। তাকে ধরে পিটুনির পর দেয়া হয় পুলিশে।

DSC02497

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা কালু ওরফে বিপ্লব উড়নচণ্ডি নেশাখোর। গতপরশু রাত ১২টার দিকে কালু তার বাড়িতে ফিরে স্ত্রী খাদিজার কাছে নেশার গাঁজা কেনার জন্য টাকা চায়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতেই কালু স্ত্রীকে নির্মমভাবে মারধর শুরু করে। দু ছেলের বড় ছেলে সাড়ে ৪ বছরের মুস্তাকিন ওরফে নয়ন জেগে উঠে। মাকে মারছে দেখে সেও কান্নাকাটি শুরু করে। শিশু নয়ন তার নেশাখোর পিতার কাছে পানি চায়। কালু পানি দেয়ার বদলে শিশু সন্তানকে মারধর করতে শুরু করে। চৌকির সাথে মাথা আছড়ে থেতলে দেয়। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। এরপরও থামেনি কালু। সে তার স্ত্রীকে আবারও মারধর করতে থাকে। এরই মাঝে খাদিজা খাতুন তার বড় ছেলে নয়নকে বিছানায় দিয়ে দেয়। মাথায় বালিশও দেয়। রাত পোয়ায়। দু বছরের ছোট ছেলে উজ্জ্বল ঘুম থেকে উঠে। নয়ন আর ওঠেনি। উঠবে না আর কোনোদিন। খাদিজার কান্নায় প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। ততোক্ষণে ঘাতক কালু ওরফে বিপ্লব গ্রামেরই বাজার তথা পারক্ষ্মীপুর বাজারে। ছেলে নয়নকে হত্যা করে সটকেছে কালু। এ খবর পাওয়া মাত্রই বাজারের লোকজন কালুকে আটক করে। শুরু হয় গণপিটুনি। গাছের সাথে বেঁধে পিটুনির এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নু খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি জনতার কবল থেকে কালুকে রক্ষা করে একটি ঘরে আটকে পুলিশে খবর দেন। প্রথমে তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই আছির উদ্দীন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে পৌঁছায় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কালুকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি শিশু নয়নের লাশ উদ্ধার করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। গতকালই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার নিকটজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। লাশ নেয়া হয় তার নানাবাড়ি কাবিলনগরের। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে খাদিজার পিতার গ্রাম তথা নয়নের নানাবাড়ি গ্রাম কাবিলনগর গ্রাম্যকবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। কালুকে গতকালই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। সে তার সন্তানকে হত্যা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকারও করেছে। তবে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত করে অবশ্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, কালু ওরফে বিপ্লব (৩০) পার্শ্ববর্তী নবগঠিত আইলহাস ইউনিয়নের বুড়োপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ ওরফে হানেফ আলীর ছেলে। এই হানেফ প্রায় দেড় যুগ আগে প্রতিপক্ষের হাতে জবাই হয়। তাকে তার প্রতিপক্ষ নজু-কাশেম গ্রুপ খুন করে। হানেফ ছিলো এলাকার ত্রাস। হানেফের স্ত্রী বুড়োপাড়ায় থাকলেও ছেলে কালুকে তার নানাবাড়ি পারলক্ষ্মীপুর পাঠেয়ে দেয়। ছোট থেকেই কালু তার তিন মামা ইউনুস, খালেক ও বিশারতের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বড় হয়ে উঠে। কাবিলনগরের আব্দুস সাত্তার ওরফে ছাত্তার ফকিরের মেয়ে খাদিজার সাথে বিয়ে করে। বিয়ে করে কালু পারলক্ষ্মীপুরে মামাদের বাড়িতেই বসবাস করে আসছিলো। কালু উড়নচণ্ডি, নেশাখোর। একে একে দু সন্তান আসে তাদের সংসারে। বড় ছেলে মুস্তাকিন ওরফে নয়ন, আর ছোট ছেলে উজ্জ্বল। পরের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে খাবার জোগায় খাদিজা। গৃহপরিচারিকার কাজ করে ক্লান্ত খাদিজা গতপরশু রাতে দু ছেলেকে নিয়েই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে বাড়ি ফিরে কালু ধরায় অশান্তির আগুন। হত্যা করে শিশু সন্তানকে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে খাদিজা কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, সংসারে খড় ভেঙে দুটো করেনা কালু। কোনো কোনো রাতে বাড়ি ফেরে। ঘরে কিছু থাকলে খায়, না থাকলে ঘুমায়। নেশার জন্য টাকা চায়। দিতে পারলে ভালো, না দিলেই মারধর শুরু করে। গত শনিবার মাঝরাতে বাড়ি ফিরে গাঁজা কেনার জন্য টাকা চায়। টাকা নেই বলে জানাতেই মারধর শুরু করে। ছেলে ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে থাকে। এ সময় ছেলে ওর কাছে পানি চেয়ে চলে, আব্বা পানি খাবো, পানি দাও। এ কথা শুনে পানি আনার বদলে ছেলেকে চৌকির সাথে খুশে মারতে থাকে। রাতে বুঝিনি যে, বুকের ধন তখনই মারা গেছে।

খাদিজা বাদী হয়ে হত্যামামলা দায়ের করেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ ও কালুর কয়েক মামা অভিন্ন ভাষায় বলেছে, কালু শুধু উড়নচণ্ডিই নয়। ওর চলাফেরা সন্ত্রাসীদের মতো। যা খুশি তাই করলেও ভয়ে কিছুই বলা যেতো না। কিছু বলতে গেলে দা হাতে নিয়ে কেটে খুন করার হুমকি দিতো কালু। ওর বাপও ছিলো সন্ত্রাসী, ওরও আচরণ সন্ত্রাসীদের মতোই। শেষ পর্যন্ত সে নিজের ছেলে হত্যা করে গেলো জেলহাজতে। আমরা সকলেই ঘাতক কালুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গ্রামবাসী অবশ্য ফাঁসি দাবি করেছে।