আজ ৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা মুক্ত দিবস

 

রহমান মুকুল: গতকাল ৭ ডিসেম্বর ছিলো আলমডাঙ্গাবাসীর জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গাকে শত্রুমুক্ত করতে পাকবাহিনীর সাথে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের দিনভর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীকে পরাজিত করে সন্ধ্যার আগেই অনিরুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধারা আলমডাঙ্গাকে শত্রুমুক্ত করে ছাড়েন। পরদিন ৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এ স্বীকৃতিতে সারাদেশের মতো আলমডাঙ্গা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদেরও মনবল আরও বেড়ে যায়। রাতে সাব সেক্টর কমান্ডার তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরীর সাথে নিয়মিত বাহিনী, আলমডাঙ্গা থানা গেরিলা কমান্ডার আব্দুল হান্নান ও থানা মুজিববাহিনী কমান্ডার কাজী কামালের দলের মুক্তিযোদ্ধারা মিলে বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা শহর আক্রমণ করার। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাবসেক্টর কমান্ডার তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী তার নিয়মিত বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ক্যাম্পে, কাজী কামাল তার মুজিববাহিনী নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে ও গেরিলা কমান্ডার আব্দুল হান্নান মাজহাট গ্রামে আবস্থান নেন।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মাজহাট গ্রামে সংবাদ গিয়ে পৌঁছায়- পাকবাহিনী তাদের গ্রামের দিকে আসছে। এ সংবাদ পেয়ে কমান্ডার আব্দুল হান্নান ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে জানলেন, চুয়াডাঙ্গার দিক থেকে পাকবাহিনী কান্তপুরের নদীর পূর্বপাড় দিয়ে আলমডাঙ্গার দিকে আসছে। তিনি ভাবলেন, হয়তোবা পাকবাহিনী আলমডাঙ্গার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত ক্যাপ্টেন তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরীর নিয়মিত বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমন করতে যাচ্ছে। তিনি যোগাযোগ করেন তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরীর সাথে। তার নির্দেশ মতো কমান্ডার আব্দুল হান্নান নুর মোহাম্মদ জকুসহ বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কান্তপুর নদীর পাড়ে এক গর্তে অবস্থান নেন। সে সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গার দিকে যাত্রা করা হাজার হাজার পাকসৈন্য ও যানবাহন রুখে দেয়ার জন্য প্রাণপন যুদ্ধে লিপ্ত হন তারা। কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক পজিশন নেয়ায় শেষ পর্যন্ত হারমানে পাকবাহিনী। গুলির শব্দে সাবধান হয়ে যায় বাঁশবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প। পরে তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরীর নির্দেশ মতো আব্দুল হান্নানের মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর পিছু ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপন করা এন্টিমাইন বিস্ফোরণে অনেক পাক সৈন্য হতাহত হয়। এদিন সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আলমডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হয়। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে রাতযাপন করে।

৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা থানা প্রাঙ্গণে সকাল থেকে শ শ লোক মুক্তির আনন্দে উল্লাস করতে করতে ছুটে আসে। স্বাগত জানায় মুক্তিযোদ্ধাদের। বিভিন্ন রাজাকারদের ধরে নিয়ে আসা হয়। এদিনটি আলমডাঙ্গার কোনো সংগঠন পালন করে না। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে ৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা শত্রু মুক্ত দিবস হিসেবে জাসদের পক্ষ থেকে বীরমুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী পালন করে আসছেন।

আলমডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হওয়ার কিংবা স্বাধীনতা লাভের ৪২ রছর পার হলেও এখনও শহরে নির্মাণ করা হয়নি স্বাধীনতাস্তম্ভ  কিংবা শহীদ স্মৃতিসৌধ। বিষয়টি যেমন লজ্জার তেমনি বেদনাদায়ক। তবে বর্তমানে আলমডাঙ্গা পৌরসভা কর্তৃক পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের ত্রিমোহনীতে ১টি স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণকাজ চলছে। তবে সেটা কতোটুকু জনআকাঙ্খা পূরণ করতে পারবে- তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।