স্টাফ রিপোর্টার: ৪ শর্ত নিয়ে রওশন এরশাদ সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে। জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নির্বাচনকালীন সরকার থেকে পদত্যাগের এবং নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এ আলোচনা শুরু হয়েছে। শর্ত গুলো হলো এক. ৭০টি আসনে নৌকার প্রতীক নির্বাচন করতে পারবে না। দুই. এরশাদের সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তিন. এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে। চার. আনুপাতিক হারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রিত্ব দিতে হবে।
এইচএম এরশাদের নানা বক্তব্য, আচরণ এবং নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা তার দলের সদস্যদের বহুমুখি তত্পরতায় ক্ষণে-ক্ষণে পাল্টাচ্ছে দৃশ্যপট। অন্যদিকে প্রকাশ্যে এক ধরনের অবস্থান এবং ভেতরে-ভেতরে সরকারের সাথে দেনদরবারের ঘটনায়ও সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। আর এসব উত্কণ্ঠা, কৌতূহল ও নাটকীয়তার মধ্যেই এরশাদ একান্ত আলাপে বসেছেন স্ত্রী রওশন এরশাদের সাথে। নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ করা না করাসহ দলের সৃষ্ট বহুমাত্রিক সংকট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন।
এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি স্থানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। এরই মাঝে আজ শনিবার এরশাদের মুখ থেকেই আসতে পারে নির্বাচনে যাওয়ার নাটকীয় ঘোষণা। এরকমই জল্পনা কল্পনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
জানা গেছে, এরশাদের এ অবস্থানের পরিণতি কি হতে পারে সেটিও তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রওশন এরশাদ। সর্বশেষ রাত ১১টায় পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জাপা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছে না এবং নির্বাচনেও যাচ্ছে। আজ এ ধরনের নাটকীয় ঘোষণা আসতে পারে। সূত্রমতে, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলটি সরকারের সাথে থাকবে। সেক্ষেত্রে রওশন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারেন। আর চিকিত্সার কথা বলে কয়েকদিনের জন্য বিদেশে যেতে পারেন এরশাদ। রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে গতকাল রাতে তার বাসায় বৈঠক করেন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকের পর ওইদিনই রাতে এরশাদের সাথে একান্তে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা-পরামর্শ করেছেন রওশন এরশাদ। তাদের দুজনের আলোচনার মাঝপর্যায়ে তাতে যোগ দেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এ সময় তারা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে সৃষ্ট জাপার সঙ্কটের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। সরকারের সাথে সমঝোতা করে নির্বাচনে গেলে কি লাভ-কি ক্ষতি, আর না গেলে কী পরিণতি হতে পারে- সেটিও উঠে আসে আলোচনায়।
এরশাদের নতুন শর্ত: ‘নির্বাচনে যাবো না-এটাই আমার শেষ কথা, এখনকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে মৃত্যু ছাড়া আমার পথ নেই’- বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ অবস্থানের কথা জানান এরশাদ। গতকাল শুক্রবার সকালেও বলেছেন, জাপার সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর অবস্থান নড়চড়ের ইঙ্গিত দিয়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে এরশাদ তার বারিধারার বাসায় সাংবাদিকদের বললেন ‘তফশিলের মেয়াদ ১০ দিন বাড়ালে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে তিনি ও তার দল নির্বাচনে যাবে। সব দল না গেলে জাপাও নির্বাচনে যাবে না।’ আগের অটল অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এরশাদ শর্তসাপেক্ষে নমনীয় হওয়ার কথা বলায় চলমান নাটকীয়তায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চারটি শর্তে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়ার প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। একটি নির্ভযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চার শর্ত মেনে নিলে এরশাদকে নির্বাচনে আসতে রাজি করাবেন রওশন এরশাদ। আর বিএনপি নির্বাচনে আসলে জাতীয় পার্টি মহাজোটে ফিরবে।