আনজাম খালেক: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের কৃষকরা ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বিদ্যুতচালিত বোরিং মালিকের বিরুদ্ধে। অবৈধ ও বেআইনিভাবে কৃষকদের নিকট থেকে সেচ প্রকল্পের টাকা আদায় করার অভিযোগ দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দিয়েছেন তারা। তবে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি বিষয়টির।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবার কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওই গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রামেরই ৩ বোরিং মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন। বর্তমানে বর্ষাকালীন বিআর-১১ ধান ক্ষেতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এ মরসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিতে বোরিং মালিকরা কৃষকের নিকট থেকে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা আদায় করছে। প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিতে ৩ হাজার টাকা বোরিং মালিকদের দিলে এক সময় ওই এলাকার কৃষকরা আর কৃষিকাজ করতে পারবে না। কোনো কৃষক টাকা কম দেয়ার কথা বলতে গেলে বোরিং মালিকরা সে কৃষকের ক্ষেতে পানি দেয়া বন্ধ করে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। কৃষকরা অভিযোগ করেন, বোরিং মালিকরা সরকারি আইন অমান্য করে সম্পুর্ণ বেআইনিভাবে টাকা আদায় করছেন। কৃষক আ. রহমান, হাফিজুর, নাসির উদ্দিন, ফেরদৌস, আ. কুদ্দুসসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, ৫/৭ বছর ধরে বোরিংগুলো চললেও গত ৩ বছর ধরে বোরিং মালিকরা কৃষকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামেও একাধিক বোরিং রয়েছে। সেসব বোরিং মালিকেরা কৃষকদের নিকট থেকে বিঘাপ্রতি সেচ দিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ টাকার মতো নেন। কিন্তু আমাদের গ্রামের বোরিং মালিকেরা বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে আদায় করছেন। টাকা কম নেয়ার কথা বললেই সেই কৃষকের জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করে দেয় বোরিং মালিকেরা। আবার বিকল্প পদ্ধতিতে মোটর বসিয়ে সেচ দিতে গেলে রাতে মাঠে থাকা মোটরগুলো নষ্ট করে দেয় তারা। এ পর্যন্ত স্থানীয় কয়েক কৃষকের ৫টি শ্যালোমেশিন নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আমরা গরিব কৃষক। বারবার আমাদের এভাবে মোটরগুলো নষ্ট করা হলে আমরা মোটর কিনবো কীভাবে? হয় সেচ মূল্য কমাতে হবে না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষুদ্ধ কৃষকেরা। কুড়ুলগাছি উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রবিউল কবীর পল্লব মোবাইলফোনে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বোরিং মালিকরা কৃষকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে আমার কাছেও অভিযোগ করেছেন। ঠাকুরপুর গ্রামের কৃষকদের পক্ষে আব্দুস সাত্তারের ছেলে আ. কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অভিযোগপত্রটি গত ২৫ নভেম্বর দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে বোরিং মালিক মৃত পাচু গাছীর ছেলে আবুবক্কর গাছীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ করা হয়। গ্রামের অপর দুটি বোরিং মালিকের বিরুদ্ধেও গ্রামবাসী অভিযোগ করেন। অন্য বোরিং দুটির মালিক হলো- সিরাজ, পল্টু এবং ওয়ায়েস কুরুনী।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গ্রামের আ. কুদ্দুসের নিকট থেকে ৩৫ কাঠা জমিতে সেচ দিতে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা হিসেবে বোরিং মালিকেরা নিয়েছেন ৫ হাজার ২শ টাকা, হায়দারের নিকট থেকে ৮ কাঠা জমিতে ১ হাজার ২শ টাকা, রমজানের ৪ কাঠায় ৬শ টাকা, খালেকের ৫ কাঠায় ৭৫০ টাকা, রমজান গালদারের সাড়ে ৭ কাঠায় ১১শ ২৫ টাকা, হান্নানের নিকট ৮ কাঠা জমিতে ১২শ টাকা, তারিকের নিকট ১২ কাঠা জমিতে ১৮শ টাকা, আ. আলিমের ২৭ কাঠা জমিতে ৩ হাজার ৯শ টাকা, সিরাজুলের ১০ কাঠা জমিতে ১৫শ, আতিয়ারের ৬ কাঠা জমিতে ৯শ, আসাদুলের ১৯ কাঠা জমিতে ২ হাজার ৮শ, নাসিরের ১ বিঘা জমিতে ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়। এছাড়াও যেসব কৃষকেরাই জমিতে সেচ দিয়েছেন সকলের নিকট থেকেই বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।