হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভোরের ঘনকূয়াশা ভেদ করে পূর্ব আকাশে সূর্য উকি দেয়নি তখনো। পাখিরা গেয়ে উঠেনি প্রভাতের গান। ঠিক তখনি শুরু হলো পাকহানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে তুমুল লড়াই। অবিরাম স্ট্যানগান, মেশিনগান, রাইফেলের গোলাবর্ষণ, আর সেলের বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। বাতাসে বারুদের গন্ধ, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দ্বিক-বিদ্বিক হারা আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা ভীত সন্ত্রস্ত। কেপে কেপে উঠছিলো হৃতপিণ্ডটাও। প্রতি মুহূর্তে উকি দিচ্ছিলো মৃত্যু। ঘড়ির কাটা আনুমানিক যখন ১১টা, তখন খানেকটা হঠাত করেই থেমে গেলো গোলাগুলির শব্দ। তবুও যেন কোথাও কোনো মানুষের সাড়া নেই। শুধু মাঝে মাঝে ভেসে আসছিলো পাকহানাদার বাহিনীর কর্কশ কণ্ঠের আওয়াজ। মুক্তি কই হাই, মুক্তি কই হাই? তার কিছুক্ষণ পর মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে খবর দেয়া হয়েছিলো সীমান্তবর্তি গ্রামের যে যেখানে আছে দ্রুত নিরাপদ স্থনে চলে যাওয়ার জন্য। এক মুহূর্ত দেরি না করে সব কিছু ফেলে রেখে সন্তান-সন্ততি বুকে আকড়ে ধরে ছুটেছিলো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। সীমান্তবর্তি গ্রামগুলো জনমানব শূন্যে পরিণত হয়েছিলো। পরে আবার শুরু হয়েছিলো মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণ। পাকসদস্যরাও করেছিলো মোকাবেলা। চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত এলাকার দামুড়হুদার কামারপাড়া, সুলতানপুর, মুন্সিপুর, জিরাট ও আকন্দবাড়িয়া দিয়ে দ্বিমুখি আক্রমন চালায় মুক্তিবাহিনী। ঢুকে পরেছিলো দর্শনা সীমান্তবর্তি গ্রামগুলোতে। তখন পিছু হঁটতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড লড়াইয়ের মুখে দর্শনা ও তার আশপাশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো পাকবাহিনী। নিহত হয়েছিলো বেশ কয়েকজন পাকবাহিনীর সদস্য। ৪ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় দর্শনা। ভয়াবহ আতঙ্কে রাত কাটিয়ে দর্শনা ও আশপাশের মানুষ গেয়ে ওঠে বিজয়ের গান। বিভিশিখাময় পরিস্থিতির ঘটে অবসান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেই দিন দর্শনায় পতপত করে উড়িয়ে ছিলো সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত বিজয়ের পতাকা। আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের নাম।
গতকাল ৪ ডিসেম্বর দর্শনা শত্রুমুক্ত দিবস। এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সাথে পালনের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সরকারি-বেসরকারি ও পেশাজীবী সংগঠন নানামুখি কর্মসূচি পালন করেছে। তকে জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে দিনটি পালন করতে দেখা যায়নি।