এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: আজ ৪ ডিসেম্বর জীবননগর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। এ দিন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর তুমুল প্রতিরোধের মুখে পাক-হানাদার বাহিনী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর জীবননগর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহ অভিমুখে পালিয়ে যায়।
জীবননগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর জীবননগর শহরে পাকহানাদার বাহিনীর পতন ঘটলেও চুড়ান্ত বিজয় আসে ৩ ডিসেম্বর। ৪ ডিসেম্বর বলে এখন যে দিবস পালন করা হচ্ছে তা মূলত তথ্যগত ভুলের ওপর করা হচ্ছে। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন।
৩০ নভেম্বর মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর আর কে সিং, মেজর বর্মন, মেজর দত্ত ও ৮ নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের বেনীপুর সীমান্ত দিয়ে দত্তনগরে প্রবেশ করে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ৩ দিন দত্তনগর অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উভয় বাহিনীর মধ্যে চলে গুলিবর্ষণ। একপর্যায়ে দখলদার বাহিনী ২ ডিসেম্বর দত্তনগর ছেড়ে জীবননগর অভিমুখে পালিয়ে আসে। মুক্ত হয় দত্তনগর ফার্ম এলাকা। দত্তনগরকে দখলমুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী জীবননগরকে মুক্ত করতে অগ্রসর হয়। ৩ ডিসেম্বর প্রত্যূষে যৌথবাহিনী জীবননগরে অগ্রসর হওয়ার খবর পাওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী জীবননগর থানা থেকে ও হাসাদাহে অবস্থানরত মেজর আনিস তার বাহিনী নিয়ে মিনাজপুর হয়ে সাবদালপুরের ওপর দিয়ে ঝিনাইদহ অভিমূখে পালিয়ে যায়। এদিন দত্তনগর-নারায়ণপুর সড়কের রথখোলা মোড়ে পাকবাহিনীর খোড়া বাঙ্কারে একাধিক পাকিস্তানি আর্মির লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও থানা কম্পাউন্ডে ফেলে যাওয়া ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর জিপ গাড়িটি তখনও জনতার দেয়া আগুনে জ্বলছিলো। থানা ভবনের উত্তর-পশ্চিম কোণে বেশ কয়েক ধর্ষিত যুবতীর বিবস্ত্র লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশগুলো উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যায়। এ দিন স্বতঃস্ফুর্ত মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধারা জীবননগরের মাটিতে প্রথম উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলার পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আফছার আলী, মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান ও ফকির মোহাম্মদ ওরফে দুখে, মীর মাহতাব আলী, আব্দুর রশিদ মোল্লা, দীন মোহাম্মদ পচা প্রমুখসহ উল্লসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতা থানা কাউন্সিল কম্পাউন্ডে লাল-সবুজের মধ্যে বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। শুরু হয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রসুলকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও মজিবর রহমানকে থানা ইনচার্জ করে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। মিত্রবাহিনী দর্শনা অভিমূখে অগ্রসর হয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয় দর্শনা।