চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ : মেহেরপুরে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধকারীদের অবস্থান
স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধের চতুর্থ দিনে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে ১৮ দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত ও ২০৬ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ ৮২ জনকে আটক করেছে। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে কাভার্ড ভ্যানচালক ও হেলপার, সীতাকুণ্ডে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা, রাঙ্গুনিয়ায় এক সিএনজি অটো রিকশাচালক, সাতক্ষীরায় ২ শিবিরকর্মী ও এক যুবলীগকর্মী, চাঁদপুরে এক ছাত্রদল ও এক শিবিরকর্মী, নোয়াখালীতে এক বিএনপিকর্মী, পটুয়াখালীতে অগ্নিদগ্ধ বৃদ্ধ রয়েছেন। হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, ফরিদপুর, ভোলা, উত্তর চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ সদর ও কুমিল্লার ৯ উপজেলায় আজ হরতাল ডেকেছে ১৮ দল।
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে উল্লেখযোগ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার একটি মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রদলের দুটি অংশই পৃথক স্থান থেকে ঝটিকা মিছিল করে। কেদারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের নিকট দুটি অটো ভাঙচুর করা হয়েছে। নতুন বাজারের নিকট একটি বিচুলিবহন করা আলমসাধুতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরে একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দকে চুয়াডাঙ্গা ফেরিঘাট রোড সংলগ্ন পুরাতনবাজার গলির পূর্বপ্রান্তে পরপর দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এসব ককটেল বিস্ফোরণে বারুদের গন্ধ ছড়ালেও হতাহত হয়নি। বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিসের সামনে ও এর কিছুক্ষণ পরই চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধকারীরা তাদের অবস্থান জানান দেয়।
বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে চতুর্থ দিনের অবরোধ এবং হরতাল চলছে। অবরোধে পুলিশের গুলি ও অবরোধকারীদের ধাওয়া খেয়ে তিন জন নিহত হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর এলাকায় পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় স্থানীয় যুবদল কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি রাসেল (২৭) নিহত হন। তিনি মুরাদপুর হাসনাবাদ গ্রামের দুলালের ছেলে।
মঙ্গলবার ভোরে হরতালের শুরুতেই নগরীতে পিকেটারদের ককটেল হামলার সময় পালাতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিহত হয়েছেন এক কন্টেইনার চালক। ভোর রাত ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায়। নিহত চালকের নাম মাহবুব (২৮)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কন্টেইনারটির দু সহকারী।
এর আগে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীতে পিকেটারদের ধওয়া খেয়ে ইসমাঈল নামে এক সিএনজি আটো রিকশাচালক নিহত হয়। মঙ্গলবার ভোরে নগরীর ইপিজেড সল্টগোলা এলাকায় পিকেটারের ককটেল হামলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কন্টেইনার গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মারা যান চালক মাহবুব।
চট্টগ্রামে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি এবং নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাসায় পুলিশি তল্লাশি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল ডাকে ছাত্রদল, যুবদল চট্টগ্রাম মহানগরী ও উত্তর দক্ষিণ জেলা। হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল মিটিং চলছে। বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও বেশ কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সকালে নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করেছে বিএনপি। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাবেক নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে অবরোধ চলাকালে সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানা এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ভোরে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় অবরোধকারীরা রেললাইন তুলে ফেললে ৪ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
চাঁদপুর শহরের কালিবাড়ি এলাকায় পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে ২ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। নিহতদের মধ্যে একজন ছাত্রদলকর্মী ও অপরজন শিবিরকর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে বিএনপি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধের সমর্থনে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৮ দলীয় জোটের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কালিবাড়ি এলাকা অতিক্রমকালে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর মিছিলটি চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি এলাকা অতিক্রমকালে হঠাত করে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। এ সময় মিছিলকারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় সিয়াম নামের এক জেএসসি পরীক্ষার্থী ও রতন নামের মাস্টার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সিয়াম চাঁদপুর আল-আমিন একাডেমী এবং রতন চাঁদপুর সরকারি কলেজের ছাত্র।
চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মানিকুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত রতন শহর ছাত্রদলকর্মী অন্যদিকে সিয়াম ছাত্রশিবির কর্মী। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানিয়েছে, অবরোধকারীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন জানান, নিহত দুজনই বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় মারা গেছে। এর মধ্যে সিয়ামের সারা শরীর বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। তিনি জানান, গুরুতর আহত একজনকে ইতোমধ্যে ঢাকা রেফার করা হয়েছে। আরো দুজনকে রেফার করার প্রস্তুতি চলছে। এ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন।
কালিবাড়ি এলাকা এখন শান্ত রয়েছে। সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও ইট ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে অবরোধকারীরা।
সাতক্ষীরায় তিনজন নিহত হয়েছেন। সাতক্ষীরার দেবহাটায় যৌথবাহিনীর সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে দু শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। শিবিরের জেলা সভাপতি রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, শিবিরকর্মী হোসেন আলী (১৪) ও আরিজুল ইসলাম (১৬)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ-বিজিবির সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজিবির সদস্যরা অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করলে দেবহাটা কালিগঞ্জ সড়কে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে এদের মধ্যে দুজন মারা যায়। কালীগঞ্জের ভাড়াশিমলায় বর্তমানে অবরোধকারী ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা মুখোমুখি অবস্থান করছে। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদরের মাহমুদপুর গ্রামে গিয়াস উদ্দীন নামে এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে অবরোধের চতুর্থ দিনে নোয়াখালীর দত্তেরহাটে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুড়ে পড়ে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহতকে নিজ দলের সমর্থক দাবি করেছে স্থানীয় বিএনপি।
অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল গতকাল চুয়াডাঙ্গা শহরে মিছিল করেছে। এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অবরোধের চতুর্থদিনে সন্ধ্যায় পান্না সিনেমাহলের নিকট থেকে ছাত্রদলের মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে রূপ নেয়। জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক জাহিদ মো. রাজীব খানের সভাপতিত্বে উপস্থাপনা করেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিলন আলী লিমন। বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক মোমিনুর রহমান মোমিন, মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না, সোলায়মান হক, আরিফ আহম্মেদ প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের অপরাংশ গতকাল সকাল ১১টার দিকে কোর্টমোড়ে ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে বলা হয়েছে, মিছিল শেষে কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন সাইফুল ইসলাম সুমন। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহজাহান খাঁন। বক্তব্য রাখেন মাসুদুল হক মাসুদ প্রমুখ। ইমরান মহলদার রিণ্টু সমাবেশ পরিচালনা করেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা কোটপাড়াস্থ কার্যালয়ে সমাবেশ করে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে বলেছে, সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইনুর হোসেন পঁচা। প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপি আলমডাঙ্গার আলমডাঙ্গার জামজামী-কুষ্টিয়া সড়ক অবরোধ করে। অবরোধে ১৮ দলীয় নেতাকর্মীরা যোগ দেন। পরে আনন্দধাম ব্রিজের ওপর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু, আলমডাঙ্গা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ টিপু, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক ডাবু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান, দারুস সালাম, বোরহান উদ্দিন, মহিনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, একরামুল হক বুলু, হাফিজুর রহমান চমক, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মাগরিবুর রহমান, ওহিদুল ইসলাম, গোলাম হোসেন, পৌর যুবদল নেতা উজ্জ্বল, মুকুল, গোলাম বিশ্বাস প্রমুখ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের জীবননগর কলেজমোড় এবং হাসাদাহে গাছ ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ পালন করে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের কলেজ মোড়ে জামায়ত-শিবির টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এছাড়াও হাসাদাহে পিকেটাররা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ পালন করে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছে অবরোধকারীরা। এ সময় অবরোধকারীরা বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটা মোড়, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর এবং গাংনীবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের পৌরকলেজ এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে কায়েমকাটা মোড়ে অবরোধকারীরা ১৮ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে একত্রিত হয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় অবরোধকারীরা সেখানে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আনছারুল হক, দফতর সম্পাদক আব্দুর রহিম, জামায়াতের পৌর আমির মাহবুবুল আলম, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মো. সাইফুল ইসলাম, জামায়াত নেতা জেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক ফয়েজ মহাম্মদ, বিএনপি নেতা রাইহানুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সাকিল আহমেদ সাব্বির। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর এলাকায় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বার, সদর উপজেলা পূর্ব সভাপতি আব্দুর রহিম, জেলা তাঁতিদলের সভাপতি আরজুল্লাহ বাবলু, বিএনপি নেতা আব্দুল আলিম, ডা. হাশেম, রাশেদুল ইসলাম, মহাসিন আলী ও জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের নায়েবে আমির সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বার, শিবির নেতা আব্দুর রহিম, বিএনপি নেতা আরজুল্লাহ বাবলু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা প্রতিটি আন্দোলনই ১ম থেকে পালন করে আসছে এখানকার নেতাকর্মীরা। ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেহেরপুরের গাংনী বাজারে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে গাংনী পৌর বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলার নেতৃত্বে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা কাথুলী মোড় থেকে মিছিল বের করে শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গাংনীবাজার বাসস্ট্যান্ড ট্রাফিক আইল্যান্ডের কাছে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দমোড়ে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন, জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ফারুক হোসেন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির রুহুল আমিন, বিএনপি নেতা শাহাবদ্দিনের নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা অবরোধ করে রাখে।
কালীগঞ্জ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে অবরোধকারীরা। ভাঙচুর করেছে সার্কেল এএসপির গাড়ি। এ সময় অবরোধকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কালীগঞ্জ থানার ওসি ও এক এসআই আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলিবর্ষণ করে। ঘটনাস্থল থেকে ৩ অবরোধকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
কোটচাঁদপুর সার্কেল এএসপি জাহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিমতলা-গান্না সড়কে পুলিশের টহল গাড়ি পৌঁছায়। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ভাঙচুর করে কোটচাঁদপুর সার্কেল এএসপির গাড়ি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৯ রাউন্ড শর্টগানের গুলিবর্ষণ করে। তখন অবরোধকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কালীগঞ্জ থানার ওসি মনির উদ্দিন মোল্লা ও এসআই হামিদ আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ বিএনপি ও ১ জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বামন্দীতে আয়োজিত বিএনপির মিছিল পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বামন্দী বাজারে স্থানীয় কার্যালয়েল সামনে এ ঘটনা ঘটে। মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের উদ্যোগে মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ অবরোধের পক্ষে ঝাড়ু মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা মিছিলটি রাস্তায় উঠতে বাধা দেয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাভেদ মাসুদ মিল্টনসহ নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ আলী, জেলা মহিলা দলের নেত্রী নুরুন্নাহার, উপজেলা যুবদলের নেতা বুলবুল, ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাস ও হাসের আলী প্রমুখ।
অপরদিকে গাংনী উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। জেলা বিএনপি সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের উদ্যোগে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গাংনী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পৌর বিএনপি যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনে মেঘলার নেতৃত্বে থানা মোড় থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে কাথুলী মোড়ে দিয়ে শেষ হয়। দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ মিছিল। গাংনী শহরের মধ্যে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মকবুল হোসেন মেঘলা। উপস্থিত ছিলেন সাইফুল ইসলাম, কানাই বাবু, যুবদল নেতা মফেজ উদ্দীন মফে, ছাত্রদল নেতা তানভীর কবীর প্রমুখ। পরে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।