স্বামীর স্বীকৃতি আর মেয়ের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে চাতালশ্রমিকের মামলা

দামুড়হুদার আলোচিত রকিবুলের কাণ্ড : মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়ে চাতালশ্রমিক আসমার দেহভোগ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: ১৭ বছর ধরে নানা আকুতি আর অনুনয়-বিনয় করেও স্বামীর স্বীকৃতি আর মেয়ের পিতৃ পরিচয় না পেয়ে শেষমেষ ওই আলোচিত চাতাল মালিক দামুড়হুদা দশমীপাড়ার রকিবুলসহ ৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন চাতালশ্রমিক আসমা খাতুন। গত বৃহস্পতিবার জেলা দায়রা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনি এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজেহারসূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৭ বছর আগে জীবন-জীবিকার তাগিদে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের যদুপুর গ্রাম থেকে দামুড়হুদা ছুটে আসেন মৃত ছবের উদ্দিনের মেয়ে আসমা খাতুন। পিতৃহীন এতিম মেয়ে আসমা খাতুন মাসিক ৩শ টাকা বেতনে কাজ পান দামুড়হুদা থানা রোডের পোস্ট অফিসের পাশে গড়ে তোলা দশমীপাড়ার মৃত আব্দুল আলিম ওরফে কালু বিহারির বড় ছেলে রকিবুলের চাতালে। মালিকের মন জয় করতে দিনরাত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে কয়েক দিনের মধ্যেই আসমা হয়ে ওঠে একজন দক্ষ চাতালশ্রমিক। তার শারীরিক গঠন চাতাল মালিকের লোলুপ দৃষ্টি যে এড়াইনি তা কয়েক দিনের মধ্যেই হাড়েহাড়ে ঠিক পায় চাতালশ্রমিক আসমা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করাসহ প্রায় সময়ই কুপ্রস্তাব দিতে থাকে চাতালমালিক রকিবুল। তখনও মাস পেরোয়নি। এরই মধ্যে চাতাল সংলগ্ন চাটাইয়ের ছোট ঘরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাকে দৈহিক মেলামেশায় বাধ্য করে চাতালমালিক রকিবুল। ওই চাতালমালিকের হাত থেকে রেহাই পেতে কাজ ছেড়ে দেয় চাতালশ্রমিক আসমা। চলে আসে নিজ বাড়িতে। পরদিন চাতালমালিক রকিবুল ও তার সহযোগী ধানকলচালক কাদের মিস্ত্রি হাজির হয় আসমাদের বাড়িতে। দেয়া হয় বিয়ের প্রলোভনসহ আলাদা বাড়ি তৈরি করে দেয়ার নানা প্রতিশ্রুতি। আসমা জানান, এ হয় না। কারণ আপনার স্ত্রী-সন্তান আছে। চতুর চাতালমালিকের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে আসমা আবারও ফিরে আসে ওই চাতালে। চাতালমালিক রকিবুল মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়ে চাতালের ছোট ঘরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আসমার সাথে একাধিকবার দৈহিক মেলামেশা করে। এরই এক পর্যায়ে চাতালশ্রমিক আসমা হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। আসমা বিষয়টি চাতালমালিককে জানালে লোক জানাজানির হাত থেকে রেহাই পেতে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার বানাছা মল্লিকের বাড়িতে প্রায় এক বছর যাবত ভাড়ায় বসবাস করে। এরই মধ্যে আসমা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে চাতালমালিক কৌশলে আসমাকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে চুয়াডাঙ্গাস্থ ডা. জিন্নাতআরার বাসায় নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আসমার গর্ভপাত ঘটায়। এ ঘটনার পর আসমা শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে বাসা পরিবর্তন করে কেদারগঞ্জ নতুনবাজার এলাকার রাসেলা বেগমের বাড়িতে ঘরভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকে চাতালশ্রমিক আসমা ও চাতালমালিক রকিবুল। আসমা আবারো গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এবারও গর্ভপাত ঘটানোর লক্ষ্যে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় রকিবুল। এরই মধ্যে একদিন কাকডাকা ভোরে রকিবুল আসমাকে বলে তোর ভাবিতো অসুস্থ (রকিবুলের প্রথম স্ত্রী ময়না বেগম)। তুই তাকে একটু সেবাযত্ন করলেই তোকে মেনে নেবে। এ অজুহাতে আসমাকে ভুল বুঝিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে নিয়ে আসে দামুড়হুদা দশমীপাড়াস্থ তার নিজ বাড়িতে। রকিবুলের প্রথম স্ত্রী ময়না বেগম চতুর রকিবুলের কথামতো আসমাকে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করে। আসমা তাতেও রাজি না হলে তাকে ঘরে আটকে রেখে ডেকে আনা হয় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন আয়া হাওয়া বেগমকে। আয়া হাওয়া খাতুন আসমার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার প্রস্তুতি নিলে আসমা তার পা জড়িয়ে ধরে। আয়াকে আসমা মা ডেকে বলে মা আমি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় বাচ্চা নষ্ট করলে আমি মরে যাবো। কিন্ত তাতেও মন গলেনি পাষণ্ড ওই অর্থলোভী আয়ার। আসমার পরনের কাপড় বদলিয়ে পরিয়ে দেয় পুরোনো কাপড়। আসমা ওই সময় আল্লাহকে স্মরণ করে বলে ‘হে আল্লাহ আমার পাপের সাজা তুমি আমাকে দাও কিন্ত তুমি আমার পেটের সন্তানকে রক্ষা করো।’ ওই সময় আসমা টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে পাঁচিল টপকে পালিয়ে আসে নিজ বাড়ি যদুপুরে। এর কিছুদিন পর পিতার বাড়িতে অবস্থানকালে আসমার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। নাম রাখা হয় চাঁদনী। পিতৃহীন আসমা আর পিতৃ পরিচয়হীন কন্যা চাঁদনীকে নিয়ে পড়ে অথৈই সাগরে। এর কিছুদিন পর আসমা চাঁদনীকে কোলে করে ছুটে আসে দামুড়হুদায়। আসমা তার কন্যা চাঁদনীর ভরণ-পোষণের দাবি করলে তাকে গালমন্দ দিয়ে সন্তানকে অস্বীকার করে তাড়িয়ে দেয় চাতালমালিক রকিবুল। এরপর নানা কষ্টে একবেলা খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে ১৫টি বছর পার করে দেয় আসমা ও তার কন্যা চাঁদনী।

এরপরও নানা আকুতি আর অনুনয় বিনয় করেও স্বামীর স্বীকৃতি আর মেয়ের পিতৃ পরিচয় না পেয়ে শেষমেষ ওই আলোচিত চাতালমালিক মুখোশধারী দামুড়হুদা দশমীপাড়ার রকিবুলসহ তার সহযোগী হিসেবে ধানকলচালক কাদের মিস্ত্রি, রকিবুলের বোনাই সিরাজ মেম্বার ও আয়া হাওয়া খাতুনকে আসামি করে জেলা দায়রা জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন স্বামীর স্বীকৃতি আর মেয়ের পিতৃ পরিচয় থেকে বঞ্চিত চাতালশ্রমিক আসমা খাতুন।

এ বিষয়ে আসমা বলেন, ‘ওই সময় আমি আদালতে মামলা করেছিলাম। কিন্ত ওই রকিবুলের মিথ্যা আশ্বাসে মামলাটি প্রত্যাহার করে নিলে সে আমার আর কোনো খোঁজখবর রাখেনি। চাতালমালিক শুধু আমারই সর্বনাশ করে খান্ত হয়নি। আমার মতো বিয়ের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আরো এক চাতালশ্রমিক দামুড়হুদার নতুন বাস্তুপুরের আরও একটি মেয়েকে একইভাবে সর্বনাশ করেছে বলে জেনেছি। আমি ওই মুখোশধারী চাতালমালিক রকিবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।’