মাথাভাঙ্গা মনিটর: চাঁদে তিন ধরনের উদ্ভিদের বীজ পাঠাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সেখানে বীজগুলো থেকে চারা গজানোর চেষ্টা করা হবে। পৃথিবীর বাইরে কোথাও বীজ অঙ্কুরিত করার চেষ্টা এটাই প্রথম।
নাসা চাঁদে ক্রেস (সালাদে ব্যবহূত পাতাবিশিষ্ট ঝাল স্বাদের শাক-গাছ), ব্যাজল (পুদিনা বা ধনেপাতার মতো সুগন্ধিযুক্ত গুল্ম) ও শালগমের বীজ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এ বীজগুলো বিশেষভাবে নির্মিত ঢাকনাযুক্ত এক প্রকার ধাতব পাত্রের ভেতরে রাখা হবে। লুনার প্লান্ট গ্রোথ চেম্বার নামের এ পাত্রে ১০ দিনের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস থাকবে। নাসা জানিয়েছে, চেম্বারে যে বাতাস থাকবে, তা বীজগুলো অঙ্কুরিত হওয়া এবং পাঁচ দিন বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। সর্বশেষ এ পরীক্ষা মহাকাশচারীদের জন্য চাঁদে অবস্থানের সময নিজস্ব খাদ্য তৈরির পথ সুগম করবে। মুন এক্সপ্রেস কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে নতুন এ মিশনের কার্যক্রম শুরু হবে। মুন এক্সপ্রেস হচ্ছে চাঁদে অভিযানের বাণিজ্যিক একটি প্রকল্প।
নাসা জানিয়েছে, বিশেষভাবে নির্মিত ওই চেম্বারের ভেতরে পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ ছিদ্রময় কাগজের ওপরে বীজগুলো থেকে চারা গজাবে। এ ক্ষেত্রে সূর্যের প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করা হবে। কার্যত, এটা অধিকাংশ স্কুলশিশু তাদের প্রথম বৈজ্ঞানিক পাঠ হিসেবে যেসব পরীক্ষা চালিয়ে থাকে, তার মতোই একটা পদ্ধতি। স্কুলশিশুরা এভাবেই পুষ্টিসমৃদ্ধ ছিদ্রময় কাগজের ওপরে বীজ বপন করে চারা গজানোর পরীক্ষা করে। নাসার আমস রিসার্চ সেন্টারের প্রধান প্রযুক্তিবিদের দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, চাঁদে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রাণের অস্তিত্বের উপযুক্ততাও মূল্যায়ন করা যেতে পারে। চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের বসবাস ও কাজ করার সুদীর্ঘ প্রত্যাশা পূরণের পথে এটা প্রথম পদক্ষেপ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চারা উৎপাদনের বিষয়টিকে পরিবেশগত ব্যাপারে মানুষের অবস্থার মতোই স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। এগুলোর কিছু জিনগত উপাদান রয়েছে, যা তেজস্ক্রিয়ার কারণে নষ্ট হতে পারে; যেমনটি ঘটে মানুষের ক্ষেত্রেও। তাই উদ্ভিদ সেখানে বেঁচে থাকতে পারলে, সম্ভবত মানুষও বাঁচবে।
এর আগে আন্তর্জাতিক মহাশূন্যে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, উদ্ভিদ নিম্ন মহাকর্ষীয় বলবিশিষ্ট জায়গাতেও বেড়ে উঠতে পারে। বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মতো মহাশূন্যেও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংগ্রহকারী মূল বৃদ্ধি পায়। অবশ্য নাসার নতুন মিশনে কোনো বীজ যে চাঁদের মাটিতে বপন করা হবে, এমন সম্ভাবনা নেই। কারণ, চন্দ্রপৃষ্ঠে যে ধূলিকণা রয়েছে, তাতে উদ্ভিদের জীবন ধারণের জন্য উপযোগী পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ নয়।