আনছারবাড়িয়া স্টেশনের অদূরে রেললাইন উৎপাটন : মেহেরপুরের ৬টি স্থানে ছিলো আন্দোলনকারীদের শক্ত অবস্থান
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: অবরোধের শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহে এক থ্রিহুইলারচালক রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে ডিঙ্গেদহের দিকে রওনা হয়ে ডিঙ্গেদহ হাটখোলার নিকট থ্রিহুইলারটি বাধার মুখে পড়ে। নিক্ষেপ করা ইট থ্রি হুইলারের কাঁচ ভেঙে চালক শুকুর আলী রক্তাক্ত জখম হন।
জীবননগরের আনসারবাড়িয়া বেলতলা রেলক্রসিঙের নিকট রেললাইন তুলে ফেলা হয়েছে। আন্দুলবাড়িয়ায় গতকাল জামায়াত বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। মেহেরপুরের ৬টি স্থানে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা ৬টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দীননাথপুরের মৃত আনছার আলীর ছেলে শুকুর আলী থ্রিহুইলার চালিয়ে এক মহিলা যাত্রী নিয়ে ডিঙ্গেদহের উদ্দেশে রওনা হন। ডিঙ্গেদহ হাটখোলার নিকট ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে চালক শুকুর আলী পড়ে থাকেন। স্থানীয়দের কোনো একজন ফায়ার স্টেশনে খবর দেন। ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা লাল গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাজির হন ঘটনাস্থলে। রক্তাক্ত জখম শুকুর আলীকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শুকুর আলীর অবস্থা আশঙ্কাজন বলে মন্তব্য করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে গতকাল উল্লেখযোগ্য অপ্রীতির ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গত বুধবার রাতে জীবননগর উপজেলার আনসারবাড়িয়া-সাবদালপুর রেললাইনের বেলতলা রেলক্রসিঙের নিকট লাইন ও ফিসপ্লেট তুলে ফেলে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধকারীরা। এ সময় তারা প্রায় ৩শ ফুট লাইন ও কয়েকটি ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলে। এছাড়াও একই রেলপথের নুড়িতলা রেলক্রসিঙের অদূরে দুর্বৃত্তরা ১১টি ফিসপ্লেট খুলে ফেললে তা জনগণের নজরে পড়ে। রেলস্টেশনে খবর দেয়ার পর খালাসিরা এসে তা ঠিক করলে ট্রেনযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। একই রাতে অবরোধকারীরা উথলী আমতলায় বিচুলিভর্তি একটি পাউয়ারটিলারে আগুন জ্বালিয়ে দিলে সেটি ভস্মীভূত হয়।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি রুহুল আমিন ও ইউনিয়ন আমির ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারি হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, অ্যাড. রুহুল আমিন, থানা নায়েবে আমির মাও. মহিউদ্দিন, ইউনিয়ন আমির ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন ও জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ বিল্লাল হুসাইন।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ টিয়ারসেল ও রাবারবুলেট নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে ১৮ দলের ডাকা ৭১ ঘণ্টা অবরোধের শেষ দিন পালিত হয়। জেলার ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। জেলার সড়ক মহাসড়কগুলোতে অবরোধ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। টানা অবরোধে জেলার কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ থানায় ৪টি মামলায় সাড়ে তিনশ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কোটচাঁদপুর ছাত্রদল সভাপতি সোহাগ হোসেন, শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান দিপু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মোল্লা, কালীগঞ্জে পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমানসহ সাড়ে তিনশ বিএনপি নেতাকর্মীকে এসব মামলায় আসামি হয়েছেন বলে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান।
এদিকে অবরোধের সমর্থনে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কেপি বসু সড়কে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমানের নেতৃত্বে মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। শহরের আরাপপুর, পবহাটি ও হামদহ মোড়ে ১৮ দল সমর্থিতরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ ধাওয়া দিলে অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। এছাড়া সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ অবরোধকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় অবরোধকারীরা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজারে রাস্তা অবরোধ করে ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বৃহস্পতিবার ভোরে কালীগঞ্জ শহরের বেজপাড়ায় দুটি চলন্ত ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। দিনব্যাপি জেলাজুড়ে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ টহল দেয়।
মেহেরপুরে ৬টি স্থানে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, অবরোধের তৃতীয় দিনে মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কের ৬টি স্থানে অবরোধ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর, বারাদি, মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বামন্দী বাসস্ট্যান্ড, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর ও গৌরিনগর মোড়ে এ অবরোধ করা হয়। টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অবরোধকারীরা। রাজনগরে জামায়াতের বিপুল সংখ্যক নারীসমর্থক সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের পিটিআই মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাও. রুহুল আমীন, সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি খালেকুজ্জামান মজনু বিএনপি জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনীর বামন্দীবাজার বাসস্ট্যান্ডে জেলা বিএনপি সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের উদ্যোগে অবরোধ করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল। উপস্থিত ছিলেন বামন্দী ইউনিয়ন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর রশিদ বাচ্চু ও ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাসসহ নেতৃবৃন্দ। সড়কের ওপরে টায়ার জ্বালিয়ে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ভোর থেকেই প্রায় দিনব্যাপি চলে এ অবরোধ। ফলে ওই সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একই সমেয় মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড়ে অবরোধের নেতৃত্ব দেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম। অবরোধকালে ১৫/২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
এদিকে অবরোধের শুরুর দিন থেকেই রাজনগর এলাকায় একাধারে চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ। আবার কখনও নারীদের ঝাড়ু মিছিল। নেতৃত্বে ছিলেন আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। আমঝুপি খামার এলাকা থেকে বারাদীবাজারের আগ পর্যন্ত প্রধান সড়কের তারা পালাক্রমে অবস্থান করছেন। ফলে মঙ্গলবার থেকেই মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক যোগাযোগ দু জেলা থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। যানবাহন তো দূরের কথা বাইসাইকেলও চলতে দেয়া হচ্ছে না। ঘোষিত কর্মসূচির শেষ সময় অর্থাত শুরুবার ভোর পর্যন্ত একাধারে অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন আব্দুল জাব্বার। অবরোধ চলাকালে গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজনগর ও আমঝুপি খামার এলাকায় পড়ে থাকা কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কে ফেলে দেয়া হয়। সন্ধ্যার পরে আমঝুপি খামার এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।