অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঝিনাইদহও ছিলো উত্তপ্ত : চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে আগুন ধরানোর অপচেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১০ম জাতীয় সংসাদ নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনও চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশ ছিলো উত্তপ্ত, অগ্নিগর্ভ। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও চুয়াডাঙ্গায় তেমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গাড়ি ঘোড়া চলেনি। মেহেরপুরের দৃশ্যও ছিলো অভিন্ন। গতকালও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়কে অবরোধ গড়ে তোলে বিএনপি-জামায়াত জোট।
চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে গতরাত ৮টার দিকে আগুন দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। পুলিশের ধাওয়ায় তারা দৌঁড়ে সরে পড়ে। দুপুরে বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় রেললাইনে সামান্য আগুন দেয়া হলেও সাথে সাথে তা নিভিয়ে ফেলেন এলাকারই এক মহিলা। শহীদ কলেজ রোডে পান্না সিনেমাহলের অদূরে রাত ৯টার দিকে আগুন জ্বালানো হয়। পুলিশ আগুন নেভায়। গতরাত ১১টার দিকে দর্শনা-জীবননগর সড়কের মোল্লাবাড়ি জামতলায় গোখাদ্য ভর্তি দুটি পাউয়ার টিলারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। জীবননগরে কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিবাদে দোকানমালিক সমিতি বিক্ষোভ করে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের কুকিয়া চাঁদপুরের শমসের আলীর ছেলে রতন ও একই গ্রামের বেল্টু মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম জীবননগরের দত্তনগর থেকে গোখাদ্য (বিচুলি) ভর্তি পাউয়ারটিলার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ১১টার দিকে পথিমধ্যে জীবননগর-দর্শনা মহাসড়কের উথলী মোল্লাবাড়ি জামতলা নামকস্থানে পৌঁছুলে ১০/১২ জনের অবরোধকারীরা সড়কের ওপর কলাগাছ ফেলে পাউয়ারটিলারের গতিরোধ করে। গোখাদ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সড়কের ওপর প্রায় ৩/৪ গজজুড়ে আগুন ধরানো বিচুলি ছড়িয়ে দেয় অবরোধকারীরা। অবরোধকারীদের হাতে আহত হয়েছেন রতন ও রবিউল নামে দুজন। এদিকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পৌঁছান দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান ও বেগমপুর ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মহব্বত আলী। পরে জীবননগর দমকলবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ অবরোধকারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল বাতিল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় দামুড়হুদা থানা বিএনপির সভাপতি লিয়াকত আলী শাহ’র গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং মুক্তির দাবিতে বিএনপি কোর্টপ্রাঙ্গণে গতকাল বুধবার বেলা ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন এম. জেনারেল ইসলাম, ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আবু জাফর মন্টু, রবিউল ইসলাম লিটন, মোকাররম হোসেন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, রফিকুল হাসান তনু, অ্যাড. এরশাদ, মঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, মোমিনুর রহমান মোমিন প্রমুখ।
বক্তারা লিয়াকত আলী শাহ’র অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে বলেন, এ সরকার পুলিশ নির্ভর সরকার। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পুলিশ দিয়ে বানচাল করা হচ্ছে। অতিসত্ত্বর দামুড়হুদা উপজেলা ১৮ দলের সভাপতি লিয়াকত আলী শাহ’র মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জ নতিডাঙ্গা সড়কের ওপর দুটি গাছ ফেলে কে বা কারা সড়ক অবরোধ করেছে। ছিনতায়ের চেষ্টা নাকি হরতালের জন্য সড়কের ওপর গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করেছে পিকেটারেরা।
জানা গেছে, গতকাল ভোরে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ নতিডাঙ্গা মাঠের সড়কের পাশে দুটি গাছ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসীর কৌতূহল হলে মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ গাছ দুটি আলমসাধুযোগে ফাঁড়িতে নেয়। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নতিডাঙ্গা থেকে আসামি ধরে থানায় ফেরার পথে নতিডাঙ্গা সড়কের পাশ থেকে কাটা দুটি গাছ পড়ে থাকতে দেখে মাঠের মধ্যে অনেক খুঁজেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সড়কের ওপর থেকে গাছ সরানো হয়। এলাকায় ব্যাপক পুলিশিটহল জোরদার করা হয়। তবে পিকেটারেরা এ কাজটি করেছে বলে ধারণা।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫২ মিনিটের দিকে জীবননগর উপজেলার উথলী রেলস্টেশনে সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী যাত্রীবাহী ২৪ আপরকেট মেল ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। এ সময় তারা ট্রেনের দুটি কম্পাটমেন্টাল ভাঙচুর করে। ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ট্রেনচালক ট্রেনটি সেনেরহুদা রেলগেটে থামায় এবং সেখান থেকে ব্যাক করে উথলী স্টেশনে নিলে এলাকাবাসী ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও গতকাল বুধবার বিক্ষোভ মিছিলকালে জীবননগর বাজারের ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে দৌলতগঞ্জ বাজার কমিটির উদ্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন দৌলতগঞ্জ বাজার কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক এম আর বাবু। দাবিপূরণ করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেয়া হয়। এ আল্টিমেটাম ঘোষণার পর রাতেই ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ী সমাজের সাথে বসে ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস প্রদান করলে ব্যবসায়ী সমাজ উদ্ভুত এ সমস্যার সমাধান করেন।
অবরোধের ২য় দিনে বিএনপি শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ সময় কমপক্ষে ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকবাজার কমিটির উদ্যোগে বিক্ষুব্ধ দোকান মালিকরা বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর বন্ধসহ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ব্যবসায়ী নেতারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। একই সাথে প্রশাসনের স্বজনপ্রীতি ও জানমালের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন। অবরোধকারীদের হামলায় বাজারের ৯টি দোকানসহ দুটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আলম ফোন ফ্যাক্স, সঞ্জয় কফি হাউস, কাশেম হোটেল, সুন্দরবন কুরিয়ার ও টেলি মিডিয়া, রশিদ ভ্যারাইটি স্টোর, মিনহাজ হার্ডওয়ারী, ফরহাদ স্টোর, এ আলী টেইলার্স অ্যান্ড গার্মেন্টস। এ সময় বাজার এলাকায় দোকানিরা ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দৌলতগঞ্জবাজার কমিটির উদ্যোগে ট্রাফিক আইল্যান্ডে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাজার কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক এমআর বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজসেবক কাজী বদরুদ্দোজা, ব্যবসায়ী হাজি মো. আব্দুল মজিদ, বাজার কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক শামিম ফেরদৌস, ব্যবসায়ী মোসাব কাক্কা, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক সামসুল আলম, রফিকুল ইসলাম, সেলিম উদ্দিন, জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নূর-এ-আলম। সমাবেশে জীবননগর বাজারের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আনছারবাড়িয়া-সাফদারপুর রেলপথের বেলতলা রেল ক্রসিঙের অদূরে দুর্বৃত্তরা ফিক্সপ্লেট খোলাকালে জনতার ধাওয়া খেয়ে ভৌঁদোড় দিয়েছে। গত মঙ্গলবার গভীররাতে এ ঘটনা করাকালে জনতা টের পেয়ে চিৎকার দিলে তারা অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে একই রেলপথের নুড়িতলা রেল ক্রসিঙের অদূরে দুর্বত্তরা ১১টি ফিক্সপ্লেট খুলে ফেলে। মাঠের কৃষকরা টের পেয়ে রেলস্টেশনে খবর দেয়। বিকেলে রেলওয়ে খালাশিরা ঘটনাস্থলের রেললাইন মেরামত করলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার ভোর থেকে মেহেরপুর জেলার তিনটি প্রধান সড়কের ১১টি স্থানে অবরোধ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এতে ভোর থেকেই মেহেরপুর জেলা শহর অন্যন্য জেলা থেকে কার্যত বিছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল ৮টার দিকে রাজনগর ছাড়া সব সড়কে অবরোধ উঠে যায়। অন্যান্য সড়কে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করলেও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের ছাতিয়ান ও বামন্দীবাজার এলাকায় জেলা বিএনপি সভাপতি মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে অবরোধ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালানো হয়। লাঠিসোঁটা নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এমপি আমজাদ হোসেন বক্তৃতায় বলেন, দু দিনের অবরোধে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ তত্ত্বাবধাকের অধীনে নির্বাচন চায়। তাই আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান তিনি।
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বুধবার সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর-মুজিবনগর প্রধান সড়কের মোনাখালী, দারিয়াপুর, গৌরিনগর মোড় ও গোপালনগর যাত্রী ছাউনির সামনে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। পরে কেদারগঞ্জবাজার হাটমাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাবেক এমিপ মাসুদ অরুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাও. সিদ্দিকুর রহমান। মাসুদ অরুন বলেন, ধর্মীয় মুল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষ আজ রাজপথে নেমেছে। বিজয় আসবেই।
এদিকে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার পোড়াপাড়া থেকে বাঁশবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া মসজিদ পর্যন্ত অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। গাংনী উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু ও উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আখেরুজ্জামান এ অবরোধের নেতৃত্ব দেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দাল হক, উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি আব্দুর রউফসহ জামায়াত-বিএনপি নেতৃবৃন্দ। অবরোধকারীরা পোড়াপাড়া মোড় থেকে বিক্ষোভ করে বাঁশবাড়িয়া বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থান নেন। এ সময় বাঁশবাড়িয়া কালভার্টের উপরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়ার পর পরই ওই স্থানে আরো দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
একই সময়ে জেলা বিএনপি সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের উদ্যোগে গাংনীর বামন্দীবাজারের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো ও বামন্দী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল। উপস্থিত ছিলেন নারীনেত্রী নুরুন্নাহার ও ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাসসহ নেতৃবৃন্দ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় অবরোধ করেন তারা।
ভোর থেকেই মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েম কাটার মোড়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। সড়কের ওপরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সেখানে ৬/৭টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর এলাকা অবরোধ করে রেখেছেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। বুধবার ভোর থেকেই বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সড়কের ওপর শুয়ে পড়েন। এ সময় কয়েক দফা টায়ার জ্বালানো হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপরে গুলি ছুড়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও অবরোধকারী রয়েছেন রাজপথে। ওই সড়কে গতকাল থেকেই কোনো যানবাহন কিংবা মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। অবরোধের নেতৃত্বে রয়েছেন আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। অবরোধের কারণে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে কোনো প্রকার যানবাহন কিংবা সাইকেল ভ্যান চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। গতকাল সন্ধ্যায় আমঝুপি খামারের সামনের সড়কে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুদ্ধ অবরোধকারীরা। গত দু দিনের অবরোধে আমঝুপি থেকে বারাদিবাজার পর্যন্ত অবরোধে পড়ে অন্তত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুরের কবলে পড়েছে। গতকাল সকাল থেকেই রাজনগর মোড় ছাড়াও বারাদিবাজার মোড় ও দরবেশপুর মাদরাসা মোড়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়ামপাড়া থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে নতুনপাড়া মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় কাসারীপাড়া মোড়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মিছিলটি বড়বাজারে যাওয়ার আগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। মিছিল কেন্দ্র করে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। তবে পুলিশ বলছে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
ইবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের ষড়যন্ত্রমূলক তফশিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল-ছাত্রশিবির ও স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় তারা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় তারা এরশাদের কুশপুত্তলিকায় লাথি ও থুথু নিক্ষেপ করে। এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী শেখপাড়া প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করে। এ সময় তারা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ২ কি.মি. জায়গাজুড়ে মহাসড়কের ওপর বসে পড়ে। সমাবেশ শেষে শিবিরকর্মীরা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা পদদলিত এবং থুথু নিক্ষেপ করে। এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ-সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদের নেতৃত্বে মিছিলটি শেখপাড়াবাজার থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটে শেষ হয়।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে ১৫টি টেম্পু ও দুটি ট্রাক ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা। মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে জামায়াত-শিবিরের সাথে যুবলীগের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়াবাজারে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে শিবির নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের শেখপাড়া, গাড়াগঞ্জ মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর, দারিয়াপুরবাজার, হুদারমোড় এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার থেকে শুরু করে বলুহর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলে আগুন জ্বালিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের হাটগোপালপুর, গোয়ালপাড়া, কালীগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের লাউতলা, ঘিঘাটি, ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের মোবারকগঞ্জ সুগার মিলগেট ও খয়েরতলা এলাকা গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের পিকেটাররা। ভোর থেকে কর্মীরা এসব সড়কে অবস্থান নেয়। এরপর বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে। পুলিশ টহল থাকলেও মহেশপুরসহ ছয় উপজেলায় মারমুখি ভূমিকায় দেখা গেছে অবরোধ সমর্থকদের। জেলার সড়ক মহাসড়কগুলোতে কোনো রকমের ইঞ্জিনচালিত যানবাহন ছেড়ে যায়নি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরবাজারে কালীগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে ভোর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার জন্য অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ তুলে দেয়ার জন্য তাদের ধাওয়া করলে তারাও পাল্টা ধাওয়া করে। এ সময় পুলিশ ৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ৩ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। অবরোধকারীদের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শন্টু চৌধুরী, এসবিকে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান ও যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল বিসুসহ ১০ জন আহত হন। এছাড়া একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে শিবিরকর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ৱ্যাব ও বিজিবি পৌঁছুলে অবরোধকারীরা পিছু হটে যায়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় ট্রেনলাইনে আগুন ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে আনারুলকে। দর্শনা পৌর কাউন্সিলর ফারুকসহ ৪ জন রয়েছে পুলিশের তালিকায়। দর্শনা আইসি পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে দর্শনা রশিক শাহ’র মাজারের সামনে জেআর পরিবহন ভাঙচুর ও গভীররাতে রেললাইনে অগ্নিসংযোগের অপচেষ্টার অভিযোগে ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে আনারুলকে। আনারুল দর্শনা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবিপাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে। আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান আরো বলেছেন, এ সময় দর্শনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন, বাসস্ট্যান্ডপাড়ার সুলতানের ছেলে নাজিম উদ্দিনসহ ৪ জন পালিয়ে যায়।
মেহেরপুর অফিস আরও জানিয়েছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপিতে রাতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ অবরোধকারীরা। বুধবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার আমঝুপি ডাল তৈল ও সবজি বীজ উৎপাদন খামারের নিকটে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বেশ কিছু সংখ্যক অবরোধকারী। এ সময় তারা একটি কাঁচামাল বোঝাই একটি আলগামন ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগে অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে দেয়।