চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ৬ বিশিষ্ট নাগরিক
স্টাফ রিপোর্টার: প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ৬ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তারা জানিয়েছেন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীই সঙ্কটের মূল কারণ। সঙ্কট কাটাতে প্রেসিডেন্টকে উদ্যোগ নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। জবাবে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নৈতিক দায়িত্ব থেকে তিনি তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেন সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী, আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বৈঠক সূত্র জানায়, ৬ বিশিষ্ট নাগরিকই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা প্রেসিডেন্টকে জানান। তারা প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, বিগত ৩০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে- বিরোধীদল ছাড়া একতরফা নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হয়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠক শেষে ড. আকবর আলি খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের এবং জাতির উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা। আমরা তার কাছে নিবেদন করেছি। দেশে বর্তমানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে এটা দেশের জন্য একটা অশনি সঙ্কেত। আমরা সবাই এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই। প্রেসিডেন্ট ধৈর্যের সঙ্গে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আমরা আশা করি যে, প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আপনারা কি মনে করেন প্রেসিডেন্টের আসলেই সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. আকবর আলি খান বলেন, প্রেসিডেন্টের প্রকৃতপক্ষেই কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কেবিনেট ফর্ম অব গভর্নমেন্টে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি সঙ্কট উত্তরণে কী করতে পারেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে আকবর আলি খান বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করতে পারবেন না। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন, অভিভাবকরা যেভাবে করে থাকেন। এ রকম কোনো প্রস্তাব করেছেন কি-না প্রেসিডেন্ট যদি দু নেতাকে চা চক্রের দাওয়াত দেন তাহলে কোনো সমাধান আসবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না এ রকম কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। বিরোধীদলকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনারা কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না- আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ দেইনি। মূল বিষয় হলো উদ্বেগ। আমরা মনে করি প্রধান বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন হলে দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সেজন্য আমরা চাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে হলে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে সমাধান শুধু প্রেসিডেন্টই দিতে পারবেন না। তিনি যদি তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন তাহলে আমরা একটা ফল পেতে পারি। এরপর কি আপনারা প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার কাছে যাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কাজেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে কোনো কিছু সমাধান করা সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে এসেছি আলাপ-আলোচনা করতে। তিনি তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যদি কিছু সমাধান বের করতে পারেন। আমরা সমাধানের আশা করছি, সমাধান হবেই- তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই। যেহেতু যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই তাই আমরা এখানে এসেছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এখানে এসেছি। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মধ্যেই এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, যখনই আমরা কোনো পদক্ষেপই নিই, তখনই আমরা আত্মবিশ্বাসের ওপর চলি। যখন পদক্ষেপ নিতে পারি তখন আশাবাদ বেড়ে যায়। আমরা চুপ করে বসে নেই। কাজ করছি। আশা করতে পারি কাজ করলে কখনও না কখনও একটি ফল পাবো।